Views
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫
👉সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা ফিরাতে নতুন আইন: অনানুগত্যে কঠোর শাস্তির বিধান
বিস্তারিত প্রতিবেদন:
ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫:
সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা ও পেশাগত দায়িত্ববোধ জোরদারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন নতুন একটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন। আজ রবিবার (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় এই অধ্যাদেশটি প্রকাশিত হয়। এতে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে একটি নতুন ধারা (৩৭ক) সংযোজন করে সরকারি কর্মচারীদের অনানুগত্যমূলক ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী আচরণকে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কঠোর শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পটভূমি
সংসদ ভেঙে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এবং প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেন। এটি “সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫” নামে অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন ধারা ৩৭ক-এর মূল বিষয়বস্তু
এই নতুন ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী:
-
এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন যা অনানুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল,
-
যুক্তিসংগত কারণ বা ছাড়া কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকেন বা কর্ম থেকে বিরত থাকেন,
-
অন্য কোনো কর্মচারীকে কর্মবিরতিতে উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন,
-
অথবা অন্য কর্মচারীর কর্তব্য পালনে বাধা দেন,
তবে উক্ত আচরণ ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য হবেন।
প্রস্তাবিত শাস্তিসমূহ
এই ধরনের অসদাচরণের জন্য তিনটি শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে:
-
নিম্নপদে অবনমন বা নিম্ন বেতন গ্রেডে স্থানান্তর
-
চাকরি থেকে অপসারণ
-
চাকরি থেকে বরখাস্ত
এই শাস্তিগুলোর মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠনের ভিত্তিতে যেকোনো একটি বা একাধিক শাস্তি প্রদান করতে পারবে।
শুনানি ও প্রতিকারের সুযোগ
অভিযোগ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। তিনি চাইলে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগও পাবেন। যদি অভিযুক্ত যথাযথ কারণ না দেখান বা শুনানির পর দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত শাস্তির জন্য আরেকটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
অভিযুক্ত কর্মচারী যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক কারণ না দেখাতে ব্যর্থ হন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চূড়ান্তভাবে শাস্তি আরোপ করতে পারবেন।
নোটিশ জারির পদ্ধতি
এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নোটিশ যথাযথভাবে জারির জন্য এটি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর ঠিকানায় প্রেরণ, বাসস্থানে লটকানো, জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো যেতে পারে। এই যে কোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করলেই তা আইনত বৈধ ও যথাযথ বলে গণ্য হবে।
আপিল ও পুনর্বিবেচনার বিধান
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সাধারণ ক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের ক্ষেত্রে কোনো আপিলের সুযোগ নেই। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী রাষ্ট্রপতির নিকট পুনর্বিবেচনার (Review) আবেদন করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
প্রশাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অধ্যাদেশ সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতিকে নিরুৎসাহিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অতীতে কর্মবিরতি, অনুপস্থিতি বা গোষ্ঠীগত অসহযোগিতার ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারার কারণে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ব্যাহত হতো। এই নতুন বিধান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ দেবে।
উপসংহার
রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ সরকারি প্রশাসনের গতিশীলতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এই বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করাও হবে সমান গুরুত্বপূর্ণ, যাতে নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তির শিকার না হন।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ - ২০২৫
রেজিস্টার্ড নং ডি এ-১
বাংলাদেশ গেজেট
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার *
অতিরিক্ত সংখ্যা
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত
রবিবার, মে ২৫, ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা
বিজ্ঞপ্তি
তারিখ: ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। ২৫ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ।
নং ২৬ (মুঃ ও প্রঃ)। -গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ/২৫ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে প্রণীত নিম্নে উল্লিখিত অধ্যাদেশটি এতদ্দ্বারা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হইল।
অধ্যাদেশ নং ২৬, ২০২৫
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত
অধ্যাদেশ
যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণকল্পে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; এবং
যেহেতু সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট ইহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে;
সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিলেন:-
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন। (১) এই অধ্যাদেশ সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। ২০১৮ সনের ৫৭ নং আইনে ধারা ৩৭ক এর সন্নিবেশ। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ৩৭ এর পর নিম্নরূপ নূতন ধারা ৩৭ক সন্নিবেশিত হইবে,
যথা:-
"৩৭ক। সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দন্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান। (১) এই আইন বা এই আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী-
(ক) এমন কোনো কার্যে লিপ্ত হন, যাহা অনানুগত্যের (insubordination) শামিল বা যাহা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অথবা
(খ) অন্যান্য কর্মচারীদের সহিত সমবেতভাবে বা এককভাবে, ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত, নিজ কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অথবা
(গ) অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাহার কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকিতে বা বিরত থাকিতে বা তাহার কর্তব্য পালন না করিবার নিমিত্ত উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন, অথবা
(ঘ) যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন,
তাহা হইলে উহা হইবে একটি অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যেকোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কর্মের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে নিম্নবর্ণিত
যেকোনো দণ্ড প্রদান করা যাইবে, যথা:-
(ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ;
(খ) চাকরি হইতে অপসারণ; এবং
(গ) চাকরি হইতে বরখাস্ত।
(৩) যেক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কোনো অপরাধের জন্য কার্যধারা গ্রহণ করা হয়, সেইক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অথবা এতদুদ্দেশ্যে তৎকর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, অভিযোগ গঠন করিবেন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীকে, অতঃপর অভিযুক্ত বলিয়া অভিহিত, কেন এই ধারার অধীন দন্ড আরোপ করা হইবে না এই মর্মে নোটিশ জারির ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাইবার নোটিশ প্রদান করিবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হইয়া শুনানি করিতে ইচ্ছুক কি না ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাহাও উক্ত নোটিশে উল্লেখ করিবেন।
(৪) অভিযুক্ত কারণ দর্শাইলে উহা বিবেচনার পর এবং, ক্ষেত্রমত, তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে উপস্থিত হইলে শুনানি গ্রহণের পর, যদি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন, অথবা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত কারণ না দর্শাইয়া থাকেন, তাহা হইলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি নোটিশের মাধ্যমে নোটিশে বর্ণিত প্রস্তাবিত দণ্ড কেন আরোপ করা হইবে না, নোটিশ জারির ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে উহার কারণ দর্শাইবার নোটিশ প্রদান করিবেন।
(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন প্রদত্ত নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কারণ দর্শাইলে উহা বিবেচনার পর অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ না দর্শাইলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (৪) এর অধীন নোটিশে বর্ণিত যেকোনো দণ্ড অভিযুক্তের উপর আরোপ করিতে পারিবেন।
(৬) যদি অভিযুক্তের নিকট নোটিশ জারি করা হয় কিংবা তাহার সর্বশেষ জ্ঞাত বাসস্থানের কোনো দৃষ্টিগোচর স্থানে লটকাইয়া জারি করা হয়, অথবা অন্যূন ২ (দুই) টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়, অথবা তাহার ই-মেইলে নোটিশ প্রেরণ করা হয়, তাহা হইলে এই ধারার অধীন নোটিশ যথাযথভাবে জারি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
(৭) এই ধারার অধীন কোনো সরকারি কর্মচারীকে দণ্ড প্রদান করা হইলে, তিনি দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ধারা ৩৪ এর অধীন আপিল করিতে পারিবেন এবং আপিল কর্তৃপক্ষ উক্ত আদেশ বহাল রাখিতে, বাতিল করিতে বা পরিবর্তন করিতে পারিবে।
(৮) উপ-ধারা (৭) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই ধারার অধীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাইবে না, তবে এইক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৩৬ এর অধীন উক্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার (Review) জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করিতে পারিবেন এবং রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবেন, সেইরূপ আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন।
(৯) উপ-ধারা (৭) এর অধীন আপিল বা, ক্ষেত্রমত, উপ-ধারা (৮) এর অধীন পুনর্বিবেচনায় (Review) প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।"।
মোঃ সাহাবুদ্দিন
রাষ্ট্রপতিগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী
সচিব।



No comments
Your opinion here...