ad

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশের সর্বশেষ নিয়ম। (প্রকাশকাল-২০২৫ খ্রি.)

Views

 


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাত্যহিক সমাবেশের সর্বশেষ নিয়ম। (প্রকাশকাল-২০২৫ খ্রি.)


দৈনিক সমাবেশ

প্রতিদিন শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পূর্বে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে, সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্মিলিত যে কর্মসূচি শৃঙ্খলার সাথে ধারাবাহিকভাবে পালন করা হয় তাকে দৈনিক সমাবেশে বলে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যালয়ে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এবং বর্ষা মৌসুমে গ্রীষ্মের প্রখর তাপ ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিদ্যালয়ের মিলনায়তন, বারান্দা কিংবা শ্রেণিকক্ষেও দৈনিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক/দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সমাবেশ পরিচালনা করবেন। দৈনিক সমাবেশ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবশ্যকীয় কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত বলে অবশ্যই পরিগণিত হবে। দৈনিক সমাবেশে সকলের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ আইনের দ্বারা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

দৈনিক সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যেসমস্ত গুণাবলী বিকশিত হয়:

দৈনিক সমাবেশ (Assembly) শিক্ষার্থীদের নানাভাবে শৃঙ্খলিত ও গুণাবলীসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি শুধু নিয়মিত উপস্থিতির জন্য নয়, বরং শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও সামাজিক দক্ষতা বিকাশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা:

নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
নিয়ম মেনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর দক্ষতা তৈরি হয়।
নির্দেশনা শুনে কাজ করার অভ্যাস গড়ে ওঠে।

দলীয় চেতনা ও নেতৃত্বগুণ:
- সমষ্টিগত কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মানসিকতা তৈরি হয়। নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পায় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে।
দেশপ্রেম ও নৈতিক শিক্ষা:
জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। বিভিন্ন নৈতিক শিক্ষা ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা তাদের মূল্যবোধ গঠনে সহায়তা করে। - ভালো ও মন্দের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা বাড়ে।

শ্রবণ দক্ষতা ও মনোযোগ:
শিক্ষকদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস তৈরি হয়। শ্রবণশক্তি ও ধৈর্যশীলতা বৃদ্ধি পায়।
আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিশ্বাস:
নিজের আবেগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস গড়ে ওঠে। সমাবেশে বক্তৃতা বা উপস্থাপনা করার সুযোগ পেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। নিজের চিন্তা প্রকাশ করার দক্ষতা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য ও ফিটনেস:
- শারীরিক সুস্থতা বাড়ে। - দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার মাধ্যমে সহনশীলতা বাড়ে। - নিয়মিত অংশগ্রহণ করলে সক্রিয় থাকার অভ্যাস তৈরি হয়।
একতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ:
বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। - ছোটদের প্রতি দায়িত্বশীলতার বোধ জন্মায়। সমাবেশ শুধু নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দৈনিক সমাবেশের ধারাবাহিক কার্যক্রম
সারিবদ্ধতা ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ
- শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট শ্রেণি ও শাখার ভিত্তিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। - শিক্ষকগণ উপস্থিত থাকবেন এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। ১. জাতীয় পতাকা উত্তোলন: বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/সিনিয়র শিক্ষক (প্রধান শিক্ষক না থাকলে) জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। পতাকা উত্তোলনের সময় সকলে সাবধান হয়ে থাকবে। ২. জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন: প্রতিষ্ঠান প্রধান জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এক পদক্ষেপ পেছনে এসে পতাকাকে অভিবাদন করবেন। সাথে সাথে অন্য সকলে সাবধান অবস্থায় হাত তুলে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। (অভিবাদনের সময় ১ বললে হাত পাশ দিয়ে প্রশস্তভাবে উঠবে, ২ বললে হাত সামনে দিয়ে সংকুচিতভাবে নামবে। ১ ও ২ এর মাঝে কমপক্ষে ৩ সেকেন্ডের বিরতি থাকবে।) ৩. পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ: পবিত্র কোরআন থেকে (অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থী থাকলে তাঁদের ধর্মগ্রন্থ থেকেও পাঠ করা যেতে পারে) একজন তেলাওয়াত করবে, অন্য সকলে শুনবে। তেলাওয়াতের সময় সকলে আরামে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাঁড়াবে। ৪. শপথ গ্রহণ: একজন শিক্ষার্থী শপথবাক্য পাঠ করবে, অন্য সকল শিক্ষার্থী তার সাথে শপথ পাঠ করবে। শিক্ষার্থীরা শপথ এর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবে এবং ডান হাত কাঁধ বরাবর সামনে তুলে আঙুলগুলো একত্রে খোলা অবস্থায় রাখবে।
(শপথের সময় সকলকে হাত মুষ্টিবদ্ধ বা খোলা (যে কোন একটি) অবস্থায় রাখতে হবে। সাধু এবং চলিত এর যে কোন একটি রীতিতে শপথ বাক্য পাঠ করতে হবে। 'আমিন' বললে সকলে একসঙ্গে হাত নামাবে।) ৫. জাতীয় সংগীত পরিবেশন: সকলে সুর ও তাল বজায় রেখে সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত গাইবে। এ সময় সকলে 'সাবধান' অবস্থায় থাকবে। ৬. প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য (প্রয়োজন হলে): বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা (পরীক্ষার তারিখ, অনুষ্ঠান আয়োজন ইত্যাদি) দিতে পারেন। ৭. পি.টি অনুশীলন: ৫ মিনিটের জন্য শরীরচর্চা (পি.টি) অনুশীলন। এখানে উল্লেখ্য যে এমন ধরনের ব্যায়াম করানো যাবে না যাতে শিক্ষার্থীদের হাতে বা জামা কাপড়ে মাটি লাগার সম্ভাবনা থাকে। ০৮. সমাবেশ শেষে: শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলার সাথে ফাইলবদ্ধ অবস্থায় নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবে। দৈনিক সমাবেশ সম্পর্কিত নির্দেশনা লাইন: পাশাপাশি দাঁড়ানো অর্থাৎ একজনের পাশে একজন, তার পাশে আরো একজন এভাবে পর্যায়ক্রমে দাঁড়ানোকে লাইন বলে। ফাইল: পিছে-পিছে দাঁড়ানো অর্থাৎ একজনের পিছে একজন এভাবে পর্যায়ক্রমে দাঁড়ানোকে ফাইল বলে।

জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার নিয়ম বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালায় নির্ধারিত আছে। সাধারণত শহীদ দিবস বা বিশেষ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। নিচে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার নিয়মাবলি দেওয়া হলো: জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও নামানোর পদ্ধতি: প্রথমে জাতীয় পতাকাটি সম্পূর্ণভাবে দণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়ায় উত্তোলন করতে হয়। - তারপর ধীরে ধীরে জাতীয় পতাকাটি পতাকা দন্ডের এক-চতুর্থাংশের দৈর্ঘ্য সমান নিচে নামিয়ে (অর্ধনমিত অবস্থানে) স্থির করা হয়। দিনশেষে জাতীয় পতাকা নামানোর সময় আবার প্রথমে সম্পূর্ণ উপরে তোলা হয়, এরপর ধীরে ধীরে নামিয়ে ফেলা হয়। যেসব দিনে পতাকা অর্ধনমিত করা হয়: রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হলে (যেমন: কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু, জাতীয় বিপর্যয় ইত্যাদি)। জাতীয় পতাকা আমাদের গর্ব এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।

শপথ
আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিব। হে মহান আল্লাহ/মহান সৃষ্টিকর্তা, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমিন।






PDF Download

No comments

Your opinion here...

Theme images by fpm. Powered by Blogger.