ad

বেঞ্জামিন ব্লুম এর শিখনক্ষেত্র

Views

 


বেঞ্জামিন ব্লুম এর শিখনক্ষেত্র

আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক বেঞ্জামিন স্যামুয়েল  ব্লুম জীববিজ্ঞানের ব্যবহৃত  ট্যাক্সোনমিতে (Taxonomy) আচরণিক ভাষায় শিক্ষার উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে ১৯৫৬ সালে শিক্ষার্থীর শিখন প্রক্রিয়াকে তিনটি শিখনেট ক্ষেত্রে (Domain)  ভাগ করেছেন। 

  ১) জ্ঞানমূলক ক্ষেত্র ( cognitive domain) বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রের উৎস হচ্ছে মস্তিষ্ক। বিভিন্ন উৎস থেকে যেমন মানুষ বই /পত্রিকা পড়ে, সিনেমার-নাটক দেখে, কোন অনুষ্ঠান বা আলোচনা শুনে নিজের মধ্যে যে জ্ঞানমূলক দক্ষতা তৈরি করে তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্র বলে।

২) আবেগীয় ক্ষেত্র: (affective domain) কোন বিষয় সম্পর্কে ব্যক্তির অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি বা আবেগ এ ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। 

৩) মনো পেশীজ ক্ষেত্র: (psychomotor domain) মন ও পেশি যোগ আচরণের সমন্বিত আচরণই মন পেশীত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত 

১) জ্ঞানমূলক ক্ষেত্র: (cognitive domain):

জ্ঞানীয় ও বা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্র শিক্ষার্থীর জ্ঞান এবং এর বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। জ্ঞানীয় ক্ষেত্রেই প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই বা অন্য কোন শিখন উৎস থেকে কোন কিছু সরাসরি মুখস্ত করে, বুঝিয়ে পড়ে এবং কোন ধারণা, তত্ত্ব,  পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, প্রভৃতি নিজের মতো করে ব্যাখ্যা প্রয়োগ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে এ কাজগুলো সব মস্তিষ্কপ্রসূত কাজ। 


১.১) জ্ঞান: (knowledge): জ্ঞান হলো কোন বিষয়ে তথ্য জেনে প্রয়োজনে স্মরণ করা সামর্থ্য। জ্ঞান স্তরের প্রশ্নের উত্তর সরাসরি পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যায়। এটি শিক্ষার্থী মুখস্ত করে অর্জন করে। উদাহরণ:  শিশু পরিচিত ফুল ফল ও জীব জন্তুর নাম বলতে পারবে।

১.২) বোধগম্যতা: (comprehension): বিষয়বস্তু/ তথ্যসমূহ কতখানি উপলব্ধি করতে পেরেছে শিক্ষার্থীর সেই ক্ষমতা কে বুঝায়। বুঝতে পারলে নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায়,  যা লিখিত বা মৌখিকভাবে বা প্রতীক, গ্রাফ, সারণি ও চিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়। উদাহরণ: বেগম রোকিয়া বিখ্যাত হওয়ার কারণ বলতে পারবে। 

১.৩) প্রয়োগ:(application):  পূর্বের শেখা বিষয়কে নতুন কোন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করার দক্ষতা কে বলা হয় প্রয়োগ। অর্থাৎ কোন তথ্য পদ্ধতি সূত্র বা কোন অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধানে কাজে লাanalysisগানোর ক্ষমতাই হল প্রয়োগ।। উদাহরণ বেগম রোকেয়ার মত সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্য তুমি করতে পারো এমন পাঁচটি কাজের নাম লিখ। 

১.৪)  বিশ্লেষণ: (analysis) :  বিশ্লেষণ হলো কোন বিষয় বা ঘটনার উপাদানগুলোকে অর্থপূর্ণভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করা সামর্থ্য। উদাহরণ: জীব ও জড় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের তুলনা ও শ্রেণীকরণ করতে পারবে 

১.৫) সংশ্লেষণ: (synthesis) : সংশ্লেষণ হলো বিশ্লেষণের ঠিক বিপরীত প্রক্রিয়া। কোন বস্তু /উপাদানের ক্ষুদ্র উপাদান সমূহকে একত্রি করনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার নাম হল সংশ্লেষণ। 

১.৫)  মূল্যায়ন (Evaluation): মূল্যায়ন হলো বিশেষ উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট মানদণ্ডের আলোকে কোন কিছুর মূল্যমান বিচার করার প্রক্রিয়া। উদাহরণ: বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল এর মধ্যে কার সাহিত্য নারী জাগরণে বেশি ভূমিকা পালন করছে তা বিচার করতে পারবে। 

২) আবেগীয়/ অনুভূতিমূলক ক্ষেত্র: (affective domain): আবেগিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের পরিবর্তন এবং যথাযথ গুণ বিচার ও খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা বিকশিত হয়। শিখনের এ ক্ষেত্রটি ব্যক্তির আবেগ বা অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত। মূলত শিখনের সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব, আবেগ, অনুভূতি প্রশংসা করা এবং যথাযথ গুণ বিচার করা সামর্থ্যের পরিবর্তন আবেগীয় ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত। 

২.১ গ্রহণ (Reception): কোন কিছু শোনা, কোন কিছুর প্রতি মনোনিবেশের ইচ্ছা বা কোন কিছু সম্পর্কে ব্যক্তির সচেতনতাকে বুঝায়। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব কিংবা আবেগ বা অনুভূতি দিয়ে কোন কিছু গ্রহণ করা। 

উদাহরণ: শ্রেণীতে শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। 

২.২ সাড়া/প্রতিক্রিয়া করা (Response): কোন অবস্থার প্রতি প্রত্যাশিত আচরণ, সক্রিয় অংশগ্রহণ করা এই নীতির মূল উদ্দেশ্য। এ নীতি অনুযায়ী শিক্ষার্থী  উদ্দীপকের প্রতি সাড়া প্রদর্শন বা আচরণ প্রকাশ করবে। 

উদাহরণ: শ্রেণীতে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারা। 

২.৩ মূল্য আরোপ: (Valuing): কোন ঘটনা, বস্তু বা আচরণের উপর মূল্য বা গুরুত্ব আরোপ করাকে বুঝায়। এটি সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা থেকে শুরু করে জটিল  অবস্থা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে থাকে। মূল্যারোপ ব্যক্তির মাঝে কতগুলো মূল্যবোধ অন্ত:স্থকরণের মাধ্যমে হয়ে থাকে, যা তার বাহ্যিক আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এক পর্যায়ে আচরণে স্থায়ী রুপ লাভ করে এবং মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে। 

উদাহরণ:  জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা অন্য বন্ধু বা শিক্ষক কিরূপ আচরণ করে তা খেয়াল করে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করে। 

২.৪ সংগঠিত করন Organizing: সংগঠিতকরণ হলো একটি মূল্যবোধ গঠনের প্রক্রিয়া। যখন শিক্ষার্থীর মধ্যে একাধিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে, তখন তা মোকাবেলা করার জন্য সে মূল্যবোধের মধ্যে আন্ত: সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। 

উদাহরণ : শিক্ষার্থীর নিজের আচরণ কে বিদ্যালয় নিয়মাবলীর সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রবণতা। 

২.৫ আত্নস্থকরণ Internalizing): এই স্তরে ব্যক্তির চরিত্র বর্ণনা করা হয় কতগুলো নিয়ন্ত্রিত মূল্যবোধ, আদর্শ এবং বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। বিশ্বাস, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ব্যক্তির সামগ্রিক জীবন-দর্শন গ্রহণ ও নিজেকে প্রকাশ করার কাজটি এক্ষেত্রে ঘটে থাকে। 

উদাহরণ: সমাবেশে বা  যে কোন অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় তার হৃদয় মন এক হয়ে যায়। 

০৩ মনো পেশির ক্ষেত্র (Psychomotor Domain)

মন এবং পেশির সমন্বয় সাধন করে শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে হাতে-কলমে শিখে। এটা অনেকটা হাতে কলমে কাজ করার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সকল ব্যবহারিক এবং ট্রেড জাতীয় বিষয় শিখন ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত। এই শিখন প্রক্রিয়াটি ও শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে শিখে। 

৩.১ অনুকরণ(Imitation): হাতে কলমে কোন কাজ শেখার পূর্বে কোন শিক্ষার্থী তা অন্যকে করতে দেখে। তারপর সে তা দেখে দেখে করতে প্রচেষ্টা চালায়। 

উদাহরণ: সাইকেল চালানো, কোন শিশুর হাতের লেখা শেখার কাজ, ছবি আকার কাজ ইত্যাদি। 

৩.২ নিপুণতার সাথে কার্যসাধন (Manipulation) এ ধাপে সে নিজের মতো করে কাজ করার চেষ্টা করে। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থী নিজের ভুল চিহ্নিত করতে পারে এবং তার সংশোধন করতে পারে। বারবার চেষ্টা করে সে সফল হয়। 

উদাহরণ: শিশু হাতের লেখা শেখার এ পর্যায়ে নিজে নিজে লিখতে পারে এবং কোন ভুল হলে তা চিহ্নিত করে সংশোধন করতে পারে। 

৩.৩ সঠিকতা (precision) পূর্বে করা কোন কাজ নির্ভুল ভাবে পুনরায় করতে পারে। কোন কাজকে তার অনুপাত ও সঠিকতা বজায় রেখে নিজের মত সম্পাদন করতে পারে। শিখনের এ পর্যায়ে একটি কাজ বারবার করার ফলে শিক্ষার্থীর সময় কমে যায়। সে অল্প সময়ে আগের তুলনায় বেশি কাজ করতে পারে। 

উদাহরণ: শিশু হাতের লেখা শেখার এ পর্যায়ে প্রায় নির্ভুলভাবে লিখতে পারে। তার ভুল করার পরিমান একেবারেই কমে যায় এবং কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। 

৩.৪ শিল্পিতকরণ (Articulation): এভাবে এ কাজটি সে কোন প্রকার ত্রুটি ছাড়াই সুন্দরভাবে করতে শেখে। 

উদাহরণ : সপ্ত স ব্যবহার করে বাংলা বর্ণমালা আত্মবিশ্বাসের সাথে লিখতে পারবে। 

৩.৫ স্বাভাবিকীকরণ (Naturalization):

এ পর্যায়ে তার কাছে কাজটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে মনে হয়।কাজটি করতে কোন প্রকার আলাদা মনোযোগ দিতে হয় না। দক্ষতা এই স্তরে স্বভাবের অংশ হয়ে যায়। 

উদাহরণ: কোন শিক্ষার্থী প্রথমে যখন হাতের লেখা শিখতে যায় তখন সে অন্য কাউকে লিখতে দেখে। তারপর সে নিজে অনুকরণ করে। অন্যের লেখার উপর লিখে চর্চা করে। এরপর নিজের মতো করে লিখতে চেষ্টা করে যদিও প্রথমে  তেমন ভালো হয় না। এভাবে চর্চা করতে করতে পূর্বের তুলনায় সময় কমে যায় এবং লেখনির কাজটি শিক্ষার্থীর নিকট সাবলীল হয়ে যায়। 





No comments

Your opinion here...

Theme images by fpm. Powered by Blogger.