জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট–সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন: রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট–সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন: রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি
ঢাকা, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ জারি করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর ২০২৫) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা থেকে প্রকাশিত অতিরিক্ত গেজেটে এই আদেশ জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়।
আদেশটি ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ তারিখে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা
গেজেটে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রকাশ ঘটে, যার ফলস্বরূপ ৫ আগস্ট তৎকালীন ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের’ পতন এবং ৮ আগস্ট বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্ম হয়।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে এবং তাদের সুপারিশের ওপর জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।
এই কমিশনের সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ প্রণীত হয়।
গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অনুমোদন নেওয়া হবে
গেজেট অনুযায়ী জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার বিষয়ক অংশ জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের অংশ হিসেবে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে।
গণভোটের ব্যালটে রাখা হবে একটি মূল প্রশ্ন, যার মাধ্যমে ভোটাররা জানাবেন—সংসদীয় কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, উচ্চ কক্ষ গঠন, নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা–সংক্রান্ত প্রস্তাবসহ জুলাই সনদে উল্লিখিত সংস্কার বাস্তবায়নে তারা ‘হ্যাঁ’ নাকি ‘না’।
গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এই আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই।
সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন
গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘হ্যাঁ’ ভোট পেলে—
নতুন করে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে।
-
সংসদ সদস্যরা একইসঙ্গে পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
-
পরিষদকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আলোকে পূর্ণাঙ্গ সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।
-
কাজ শেষ হলে পরিষদ বিলুপ্ত হবে।
পরিষদের প্রথম অধিবেশনে সভাপতি ও উপ-সভাপতি নির্বাচন করা হবে। সংসদ সচিবালয় পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।
নতুন কাঠামোতে প্রস্তাবিত প্রধান সংস্কারগুলো
গেজেটে উল্লেখিত মূল প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস
জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন।
২. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠন
নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের উচ্চ কক্ষ গঠন।
-
ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উচ্চ কক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
৩. নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি ও ক্ষমতার ভারসাম্য
নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির দিকনির্দেশনা
-
বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার
-
গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে বিরোধী দলের সভাপতি
-
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ
-
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আরও কার্যকর করা
৪. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার
জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে থাকা ৩০টি সংস্কার-প্রস্তাব বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ যুক্ত হবে
আদেশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জুলাই জাতীয় সনদকে সরাসরি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উচ্চ কক্ষ গঠন ৩০ দিনের মধ্যে
সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চ কক্ষ গঠন করতে হবে।
উচ্চ কক্ষের মেয়াদ নিম্নকক্ষের মেয়াদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
শপথ ও কার্যপ্রণালী
সংসদ সদস্যদের সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে পরিষদ সদস্যরাও শপথ নেবেন।
পরিষদের কর্মকাণ্ড সংসদের মতো বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তির আওতায় থাকবে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরিষদের হাতেই
পরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধান সংস্কার চূড়ান্ত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে; এর জন্য অন্য কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে না।
সরকার দ্রুততার সঙ্গে গেজেটে চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশ করবে।
রাষ্ট্রপতি ও সচিবের স্বাক্ষর
গেজেটটি রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন স্বাক্ষরিত
এবং
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী কর্তৃক প্রকাশিত।
রেজিস্টার্ড নং ডি এ-১
বাংলাদেশ গেজেট
অতিরিক্ত সংখ্যা
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ
মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা
আদেশ
তারিখ: ২৮ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ/ ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ।
নং ০১ (মুঃ ও প্রঃ)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ২৮ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ/
১৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে প্রণীত নিম্নে উল্লিখিত আদেশটি এতদ্দ্বারা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে
প্রকাশ করা হইল।
আদেশ নং ০১, ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫
যেহেতু সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের প্রকাশ ঘটিয়াছে; এবং
যেহেতু উক্ত গণঅভ্যুত্থানের ফলে ৫ আগস্ট ২০২৪ (২১ শ্রাবণ ১৪৩১) তারিখে তৎকালীন
ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে, ৬ আগস্ট ২০২৪ (২২ শ্রাবণ ১৪৩১) তারিখে জাতীয় সংসদ ভাঙ্গিয়া
দেওয়া হয় এবং ৮ আগস্ট ২০২৪ (২৪ শ্রাবণ ১৪৩১) তারিখে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত
হয়, যাহা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকারিতা ও স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে; এবং
যেহেতু রাষ্ট্রীয় সংস্কার সাধনের মাধ্যমে সুশাসন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ করিবার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থায় সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করে এবং উক্ত কমিশনসমূহ স্ব স্ব প্রতিবেদন সরকারের নিকট পেশ করে; এবং যেহেতু উপরিউক্ত প্রতিবেদনগুলিতে অন্তর্ভুক্ত সুপারিশসমূহের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (২৯ মাঘ ১৪৩২) তারিখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে; এবং
যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের সহিত আলোচনাক্রমে সংবিধান সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কারের সুপারিশ সংবলিত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ প্রণয়ন করে এবং রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে উক্ত সনদে স্বাক্ষর ও তাহা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে; এবং
যেহেতু সংবিধান সংস্কার বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং তদুদ্দেশ্যে গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও উক্ত পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার করার আবশ্যকতা রহিয়াছে;
এবং
যেহেতু উপরে বর্ণিতমতে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন সম্পন্ন করিবার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা একান্ত প্রয়োজন;
সেহেতু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরামর্শক্রমে, রাষ্ট্রপতি এই আদেশ জারি করিলেন:-
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন। (১) এই আদেশ জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে।
(২) এই আদেশের
(ক) ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ১২ ও ১৫ অনুচ্ছেদ অবিলম্বে কার্যকর হইবে, এবং
(খ) ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১৩ ও ১৪ অনুচ্ছেদ গণভোটের ইতিবাচক ফলাফল সাপেক্ষে সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখে কার্যকর হইবে।
২। সংজ্ঞা। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আদেশে,-
(ক) "গণভোট” অর্থ এই আদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত গণভোট;
(খ) “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” অর্থ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান;
(গ) "জুলাই জাতীয় সনদ” অর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ এবং উক্ত কমিশন কর্তৃক স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫;
(ঘ) "জাতীয় সংসদ" অর্থ সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে গঠিত জাতীয় সংসদ;
(ঙ) “নির্বাচন কমিশন” অর্থ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত নির্বাচন কমিশন;
৬। গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়ন। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন
কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হইবে।
৭। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন, উহার কার্যাবলি ও বিলুপ্তি। (১) গণভোটে উপস্থাপিত
প্রশ্নের উত্তরে প্রদত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট (হ্যাঁ) সূচক হইলে,-
(ক) এই আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হইবে, যাহা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে;
(খ) উক্ত নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ একইসাথে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসাবে এবং এই আদেশ অনুসারে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন;
(গ) পরিষদ উহার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হইতে ১৮০ (একশত আশি) কার্য দিবসের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ এবং গণভোটের ফলাফল অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করিবে এবং তাহা সম্পন্ন করিবার পর পরিষদের কার্যক্রম সমাপ্ত হইবে।
(২) পরিষদের কার্যধারায় অংশগ্রহণের সময় নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ পরিষদ সদস্য হিসাবে অভিহিত হইবেন।
(৩) এই আদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, পরিষদ ইহার অধিবেশন আহ্বান ও মুলতবি, সংবিধান সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপনের পদ্ধতি, উক্ত প্রস্তাব বিবেচনা ও গ্রহণ এবং অন্য সকল বিষয়ে কার্যপ্রণালী নির্ধারণ করিবে।
(৪) জাতীয় সংসদ সচিবালয় পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবে।
৮। শপথ এবং শপথ-পাঠ পরিচালনা। (১) নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সংসদ-সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণের পর একই শপথ অনুষ্ঠানে এই আদেশের তফসিল-১ অনুযায়ী পরিষদ-সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করিবেন এবং অনুরূপ শপথপত্রে স্বাক্ষর দান করিবেন।
(২) সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের ক্ষেত্রে যিনি শপথ-পাঠ পরিচালনা করিবেন তিনিই এই আদেশের তফসিল-১ এ বিধৃত ফরমে পরিষদ-সদস্যদের শপথ-পাঠ পরিচালনা করিবেন।
৯। পরিষদের সভাপ্রধান। (১) পরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে পরিষদ-সদস্যগণ
ইহার সভাপ্রধান ও উপ-সভাপ্রধান নির্বাচন করিবে; এবং উক্তরূপ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত পরিষদের
বয়োজ্যেষ্ঠ একজন সদস্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যর সম্মতিক্রমে বৈঠকে সভাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন
করিবেন।
(২) সভাপ্রধান ও উপ-সভাপ্রধান উভয়ের অনুপস্থিতিতে পরিষদের কার্যপ্রণালী অনুযায়ী কোন পরিষদ-সদস্য সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করিবেন।
(চ) “নির্বাচিত প্রতিনিধি” অর্থ সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুসারে গঠিত জাতীয় সংসদের সকল সংসদ সদস্য;
(ছ) "পরিষদ” অর্থ এই আদেশের ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ;
(জ) “সভাপ্রধান” অর্থ এই আদেশের ৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে পরিষদের সভায় সভাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি;
(ঝ) “সংবিধান” অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান; এবং
(ঞ) “সংসদ নির্বাচন” অর্থ এই আদেশ জারির অব্যবহিত পরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন।
৩। জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গণভোট। জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এই আদেশ এবং জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত অংশ গণভোটে উপস্থাপন করা হইবে।
৪। গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্ন। (১) গণভোটে নিম্নরূপ প্রশ্ন উপস্থাপন করা হইবে
"আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?"; (হ্যাঁ/না):
(ক) নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হইবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হইবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ কক্ষ গঠিত হইবে এবং সংবিধান সংশোধনী করিতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হইবে।
(গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল হইতে ডেপুটি স্পীকার ও কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০ টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হইয়াছে-সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকিবে।
(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হইবে।
(২) ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হইবে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যালটে প্রত্যেক ভোটার গোপনে ভোটদান করিবেন।
৫। গণভোট অনুষ্ঠান। -এই আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন এই আদেশ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠান করা হইবে।
১০। পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, কোরাম, ভোটদান, ইত্যাদি। (১) সংসদ নির্বাচনের ফল
ঘোষিত হইবার ৩০ (ত্রিশ) পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যে পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করা হইবে অনুরূপ পদ্ধতিতে পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করা হইবে।
(২) পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ৬০ (ষাট) জন পরিষদ সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন হইবে।
(৩) সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিষদের মোট সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে; এবং অন্যান্য বিষয়ে উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, সমসংখ্যক ভোটের ক্ষেত্রে সভাপ্রধান নির্ণায়ক ভোট প্রদান করিবেন।
১১। পরিষদ ও উহার সদস্যদের বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি। পরিষদের কোনো কার্যধারার
বৈধতা এবং পরিষদ-সদস্যদের বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি জাতীয় সংসদ ও সংসদ-সদস্যদের অনুরূপ হইবে।
১২। জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
১৩। সংবিধান সংস্কার অবিলম্বে কার্যকর করা। (১) এই আদেশের ৭ অনুচ্ছেদের
উপ-অনুচ্ছেদ (১) (গ) অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হইবার পর যে সকল সংস্কার অবিলম্বে কার্যকর করা সম্ভব তাহা অবিলম্বে কার্যকর করা হইবে এবং এইক্ষেত্রে সরকার সকল যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(২) এই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (১) এর সামগ্রিকতাকে ক্ষুন্ন না করিয়া, এই আদেশের ৭অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (১) (গ) অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হইবার পর ৩০ (ত্রিশ) কার্য দিবসের মধ্যে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation-PR) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা হইবে এবং উহার কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হইবে।
(৩) এই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (২) অনুসারে গঠিত উচ্চকক্ষের মেয়াদ ইহার শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের মেয়াদের শেষ দিবস পর্যন্ত হইবে।
(৪) এই আদেশ জারির অব্যবহিত পরে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনের সময় জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের প্রয়োজন হইবে না।
(৫) এই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (২) অনুসারে উচ্চকক্ষ গঠনের ক্ষেত্রে যে-কোনো প্রতিবন্ধকতা দূর করিবার উদ্দেশ্যে পরিষদ প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে এবং সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করিতে পারিবে।
১৪। পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার চুড়ান্তকরণ ও প্রকাশ। (১) পরিষদ কর্তৃক গৃহীত
সংবিধান সংস্কার চূড়ান্ত হইবে এবং উক্তরূপ সংস্কার বিষয়ে অন্য কোনোভাবে অনুমোদন বা সম্মতির প্রয়োজন হইবে না।
(২) পরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধান সংস্কারের পূর্ণাঙ্গ পাঠ এবং উক্তরূপে সংস্কারকৃত সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ পাঠ অনতিবিলম্বে সরকার সরকারি গেজেটে প্রকাশ করিবে।
১৫। সরকার কর্তৃক নির্দেশনা জারি। এই আদেশের বিধানাবলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করিতে পারিবে।
তফসিল-১
[অনুচ্ছেদ ৮ দ্রষ্টব্য]
সংবিধান সংস্কার পরিষদ সদস্যদের শপথ ফরম
সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে যিনি শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন তিনিই পরিষদ-সদস্যদের নিম্নরূপ শপথ পরিচালনা করিবেন:
"আমি,. সংবিধান সংস্কার পরিষদ সদস্য হিসাবে সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব;
আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; এবং
পরিষদ-সদস্য রূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দিব না।”।
তারিখ: ২৮ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
মোঃ সাহাবুদ্দিন
রাষ্ট্রপতি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী
সচিব।









No comments
Your opinion here...