নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন: নতুন অধ্যাদেশ জারি করলেন রাষ্ট্রপতি
📰 নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন: নতুন অধ্যাদেশ জারি করলেন রাষ্ট্রপতি
প্রকাশের তারিখ: রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
সূত্র: বাংলাদেশ গেজেট (অতিরিক্ত সংখ্যা), আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
🔶 রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে বড় পরিবর্তন: গঠিত হচ্ছে "নির্বাচন কমিশন সার্ভিস"
সংসদ ভেঙে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে "নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫" জারি করেছেন।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (আইন নং ৫, ২০০৯)-এর গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধারা—ধারা ৩ ও ধারা ৪—সংশোধন করা হয়েছে।
🔸 ধারা ৩ সংশোধন: নতুন সার্ভিস কাঠামো
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আলাদা একটি প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা হবে, যার নাম হবে —
➡️ “নির্বাচন কমিশন সার্ভিস”।
এর মাধ্যমে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন থেকে স্বতন্ত্র একটি সার্ভিস কাঠামোর আওতায় আসবেন।
🔸 ধারা ৪ সংশোধন: বিস্তৃত দায়িত্ব ও কার্যাবলি
সংশোধিত ধারায় নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমকে আরও স্পষ্ট ও বিস্তৃত করা হয়েছে। নতুন দফা অনুযায়ী, কমিশনের দায়িত্ব ও ক্ষমতার পরিধিতে যুক্ত হয়েছে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ—
১️⃣ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান।
২️⃣ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ।
৩️⃣ সংসদীয় আসনসমূহের সীমানা নির্ধারণ।
৪️⃣ রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদসহ সব নির্বাচনের আয়োজন।
৫️⃣ সারাদেশে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও গেজেটে প্রকাশ।
৬️⃣ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, প্রতীক বরাদ্দ ও সংলাপ আয়োজন।
৭️⃣ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের (রিটার্নিং অফিসার থেকে পোলিং অফিসার পর্যন্ত) নিয়োগ ও তালিকা সংরক্ষণ।
৮️⃣ ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি উপকরণ মুদ্রণ ও সংরক্ষণ।
৯️⃣ নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ ও গেজেটে প্রকাশ।
🔟 স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল গঠন।
⓫ নির্বাচন গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশনা।
⓬ নির্বাচনের পর রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশ।
⓭ নির্বাচনি আইনসমূহের পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সংশোধন।
🔶 কেন অধ্যাদেশ?
অধ্যাদেশের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে—
“যেহেতু সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং আশু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হইল।”
অর্থাৎ, সংসদ না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতাবলে এই সংশোধন করা হয়েছে।
🔸 বিশ্লেষণ: স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের দিকে পদক্ষেপ
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, “নির্বাচন কমিশন সার্ভিস” গঠন নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক স্বাধীনতা আরও সুসংহত করবে। কমিশনের নিজস্ব জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় স্বনির্ভরতা আসবে।
তাছাড়া, ধারা ৪-এ গবেষণা, তথ্য সংরক্ষণ, রাজনৈতিক সংলাপ ও নির্বাচনি আইনি কাঠামো পর্যালোচনার বিষয় যুক্ত হওয়ায় কমিশনের কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত ও আধুনিক হয়েছে।
🏛️ রাষ্ট্রপতির ঘোষণা
অধ্যাদেশের শেষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে—
“মোঃ সাহাবুদ্দিন, রাষ্ট্রপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।”
এর মাধ্যমে অধ্যাদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
📌 সারসংক্ষেপে
-
অধ্যাদেশ নং: ৫০, ২০২৫
-
নাম: নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫
-
মূল বিষয়: নির্বাচন কমিশনের জন্য “নির্বাচন কমিশন সার্ভিস” গঠন এবং দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্প্রসারণ
-
কার্যকর: অবিলম্বে
-
প্রণয়নকারী: রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন
বাংলাদেশ গেজেট
অতিরিক্ত সংখ্যা
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত
রবিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ
মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা
অধ্যাদেশ নং-৫০, ২০২৫
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত
অধ্যাদেশ
যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণকল্পে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫ নং আইন) এর অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
যেহেতু সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট ইহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে;
সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিলেন:-
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন। (১) এই অধ্যাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়
(সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। ২০০৯ সনের ৫ নং আইনের ধারা ৩ এর সংশোধন।-নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন,
২০০৯, অত:পর উক্ত আইন বলিয়া উল্লিখিত, এর ধারা ৩ এর উপ-ধারা (৪) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা (৪) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-
"(৪) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস থাকিবে।"।
৩। ২০০৯ সনের ৫ নং আইনের ধারা ৪ এর সংশোধন। উক্ত আইনের ধারা ৪ এর উপ-ধারা
(২) এর দফা (ক) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ দফা (ক) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-
"(ক) নিম্নবর্ণিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহায়তা প্রদান, যথা:-
(১) জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান;
(২) নাগরিকগণের ভোটাধিকার বাস্তবায়ন সম্পর্কিত জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান;
(৩) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনি আসনসমূহের সীমানা নির্ধারণ;
(৪) রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নির্বাচন পরিচালনাসহ উপ-নির্বাচন এবং গণভোট অনুষ্ঠান;
(৫) ভোট গ্রহণের নিমিত্ত সারাদেশে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও সরকারি গেজেটে প্রকাশ;
(৬) রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রদান, প্রতীক বরাদ্দ ও সংরক্ষণ, নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলের রেজিস্টার সংরক্ষণ, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত নিয়মিত যোগাযোগ এবং সংলাপ আয়োজনসহ এতৎসংক্রান্ত কার্যাবলি;
(৭) প্রত্যেক নির্বাচনের জন্য সারাদেশে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থাদি গ্রহণ এবং ভোটগ্রহণের নিমিত্ত প্যানেল ও নিয়োগকৃতদের তালিকা সংরক্ষণ (যেমন- রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার, প্রভৃতি);
(৮) ব্যালট পেপারসহ সকল প্রকারের নির্বাচনি মালামাল মুদ্রণ, সরবরাহ এবং নির্বাচনের পর সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ;
(৯) রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ, গণভোট এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ এবং প্রেরণ সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ;
(১০) প্রত্যেক নির্বাচনের ফলাফল একত্রীকরণ এবং সরকারি গেজেটে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ;
(১১) স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচনি দরখাস্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং এতৎসংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদন;
(১২) নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং এতদুদ্দেশ্যে সকল ধরনের তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণসহ তথ্য অধিকার আইন অনযায়ী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সহায়তাকরণ:
(১৩) জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পর রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং
(১৪) নির্বাচনি আইনি কাঠামো পর্যালোচনা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।"।
মোঃ সাহাবুদ্দিন
রাষ্ট্রপতি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
No comments
Your opinion here...