নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা: নতুন অধ্যাদেশ জারি করলেন রাষ্ট্রপতি
নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা: নতুন অধ্যাদেশ জারি করলেন রাষ্ট্রপতি
সংবাদ প্রতিবেদন:
ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০২৫ (রবিবার):
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন “নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১”-এর অধিকতর সংশোধনের উদ্দেশ্যে একটি নতুন অধ্যাদেশ (অধ্যাদেশ নং-৫১, ২০২৫) জারি করেছেন। এই অধ্যাদেশ আজ রবিবার বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ বর্তমানে ভেঙে যাওয়ায় এবং জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই অধ্যাদেশ জারি করেন।
🔹 অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য
অধ্যাদেশটির লক্ষ্য হলো নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন করে নির্বাচন-সম্পর্কিত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরও কঠোর করা।
🔹 প্রধান সংশোধনসমূহ এক নজরে
১. ‘নির্বাচন-কর্মকর্তা’র সংজ্ঞা বিস্তৃত করা হয়েছে
এখন থেকে শুধু রিটার্নিং অফিসার বা ভোটগ্রহণকারী নয়, বরং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও “নির্বাচন কর্মকর্তা” হিসেবে গণ্য হবেন, যদি তারা নির্বাচন কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
২. অসদাচরণের শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে
যে কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা যদি—
কমিশনের আদেশ পালনে ব্যর্থ হন,
-
ইচ্ছাকৃতভাবে আইন লঙ্ঘন করেন,
-
দায়িত্বে অবহেলা করেন বা অসদাচরণ করেন—
তাহলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারণ, বাধ্যতামূলক অবসর বা পদাবনতি পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যাবে।
৩. নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি
কমিশন এখন থেকে নিজ উদ্যোগে বা রিটার্নিং অফিসারের সুপারিশে কোনো কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে।
এছাড়া কমিশন যদি মনে করে কোনো কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, তবে কমিশন সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
৪. শৃঙ্খলাভঙ্গের তথ্য নথিভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা
কোনো কর্মকর্তা যদি নির্বাচন সংক্রান্ত অসদাচরণে অভিযুক্ত হন, তবে তার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের তথ্য তাঁর ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বহি ও বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে (ACR) সংযোজন করতে হবে।
৫. সরকারের সাথে মতপার্থক্য হলে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে
অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ভিন্নমত হলে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
৬. নতুন দণ্ডবিধান সংযোজন
ধারা ৪ লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা।
-
ধারা ৫ অনুসারে কমিশনের আদেশ অমান্য করলে ১ থেকে ৫ বছর কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
🔹 বিশেষজ্ঞ মত
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংশোধন নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ক্ষমতা ও স্বাধীনতা আরও শক্তিশালী করবে, বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে।
🔹 রাষ্ট্রপতির ঘোষণা
অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর রয়েছে এবং তাতে উল্লেখ করা হয়েছে—
“এই অধ্যাদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।”
উল্লেখ্য, এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে ভবিষ্যতের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের আইন লঙ্ঘন বা দায়িত্বে গাফিলতির জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে, যা নির্বাচন প্রশাসনে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়াবে।
প্রস্তুত করেছেন:
বাংলাদেশ সংবাদ ডেস্ক
সূত্র: বাংলাদেশ গেজেট (অতিরিক্ত সংখ্যা), আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ৫ অক্টোবর ২০২৫।
বাংলাদেশ গেজেট
অতিরিক্ত সংখ্যা
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত
রবিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা
বিজ্ঞপ্তি
তারিখ: ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ/০৫ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
নং ৫১ (মুঃ ও প্রঃ)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ/০৫ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে প্রণীত নিম্নে উল্লিখিত অধ্যাদেশটি এতদ্বারা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হইল।
অধ্যাদেশ নং-৫১, ২০২৫
নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত
অধ্যাদেশ
অধ্যাদেশ
যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণকল্পে, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৩ নং আইন) এর অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; এবং
যেহেতু সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট ইহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে;
সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিলেন:-
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন।
(সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে। (১) এই অধ্যাদেশ নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান)
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। ১৯৯১ সনের ১৩ নং আইনের ধারা ২ এর সংশোধন। নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান)
আইন, ১৯৯১, অতঃপর উক্ত আইন বলিয়া উল্লিখিত, এর ধারা ২ এর দফা (ঘ) ও (ঙ) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ দফা (ঘ) ও (ঙ) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-
“(ঘ) “নির্বাচন-কর্মকর্তা" অর্থ নির্বাচন সংক্রান্ত কোন দায়িত্ব বা কর্মে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি বা নির্বাচন পরিচালনার সহিত সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি বা রিটার্নিং অফিসার বা ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাও (যেমন- প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখিবার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(ঙ) "নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ” অর্থ কোন ব্যক্তিকে চাকুরীতে নিয়োগকারী কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ বা কোন মন্ত্রণালয়/বিভাগ বা কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান।"।
৩। ১৯৯১ সনের ১৩ নং আইনের ধারা ৫ এর সংশোধন। উক্ত আইনের ধারা ৫ এর-
(ক) উপ-ধারা (১), (২), (৩) ও (৪) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা (১), (২), (৩) ও (৪)
প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-
"(১) কোন নির্বাচন-কর্মকর্তা নির্বাচন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে কমিশন বা কমিশন কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, রিটার্নিং অফিসারের কোন আদেশ বা নির্দেশ পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হইলে বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করিলে বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোন আইনের বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করিলে বা উহার অধীন কোন অপরাধ করিলে বা কর্তব্যে অবহেলা করিলে তিনি অসদাচরণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অসদাচরণ তাহার চাকুরী বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ মর্মে বিবেচিত হইবে।
(২) কোন নির্বাচন-কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণ করিলে তাহার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাহাকে চাকুরী হইতে অপসারণ বা বরখাস্ত করিতে পারিবে বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করিতে পারিবে বা তাহার পদাবনতি করিতে পারিবে বা তাহার পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের জন্য স্থগিত রাখিতে পারিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ কোন শাস্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ব্যর্থতা, অস্বীকৃতি, লঙ্ঘন বা অপরাধের জন্য অন্য কোন আইনে নির্ধারিত কোন দন্ড প্রদান বা উহার জন্য কোন আইনগত কার্যধারা গ্রহণকে ব্যাহত বা বারিত করিবে না।
(৩) কোন নির্বাচন-কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণ করিলে কমিশন বা কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং অফিসার তাহাকে, তাহার বিরুদ্ধে তজ্জন্য তাহার চাকুরীবিধি অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণ সাপেক্ষে, অনধিক ২ (দুই) মাসের জন্য সাময়িকভাবে চাকুরী হইতে বরখাস্তের আদেশ দিতে পারিবেন এবং উক্তরূপ বরখাস্তের আদেশ তাহার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাহার চাকুরী বিধি অনুযায়ী প্রদত্ত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং তদনুযায়ী ইহা কার্যকর হইবে।
(৪) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অসদাচরণের জন্য কোন নির্বাচন-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে কমিশন বা কমিশন কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং অফিসার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব প্রাপ্তির ১ (এক) মাসের মধ্যে উক্তরূপ কার্যধারা গ্রহণ করিবে এবং তৎসম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করিবে।";
(খ) উপ-ধারা (৪) এর পর নিম্নরূপ নূতন উপ-ধারা (৫), (৬) ও (৭) সংযোজিত হইবে, যথা:-
"(৫) উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত কমিশনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে যেইরূপ কার্যক্রম গ্রহণ করা হইয়াছে তাহা উক্ত কর্মকর্তা বা ব্যক্তির ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বহি এবং বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ ও ডোসিয়ারে অন্তর্ভুক্ত থাকিবে এবং তৎসম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করিতে হইবে।
(৬) সরকার এবং কমিশনের মধ্যে এই ধারার কোন বিধান সম্পর্কে ভিন্নমত দেখা দিলে উক্ত বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাইবে।
(৭) কমিশনের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তব্যে অবহেলা করিয়াছেন, তাহা হইলে উক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কমিশন প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।"।
৪। ১৯৯১ সনের ১৩ নং আইনের ধারা ৬ এর সংশোধন। উক্ত আইনের ধারা ৬ এর উপ-ধারা (১) ও (২) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা (১) ও (২) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-
"(১) কোন ব্যক্তি ধারা ৪ এর উপ-ধারা (১) বা (২) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদন্ডে, বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি ধারা ৫ এর উপ-ধারা (৩), (৪) বা (৫) এর অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ প্রতিপালন বা কার্যকর না করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর এবং অন্যূন ১ (এক) বৎসরের কারাদন্ডে, বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।"।
মোঃ সাহাবুদ্দিন
রাষ্ট্রপতি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
No comments
Your opinion here...