দেশের বিচারব্যবস্থায় ডিএনএ পরীক্ষার বিপ্লব: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের কার্যক্রম অবহিতকরণ
দেশের বিচারব্যবস্থায় ডিএনএ পরীক্ষার বিপ্লব: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের কার্যক্রম অবহিতকরণ
ঢাকা, ২৭ আগস্ট ২০২৫:
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে ডিএনএ পরীক্ষার ভূমিকা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০০৬ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ড্যানিশ উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি ইতোমধ্যে বিচার, তদন্ত ও মানবাধিকার সুরক্ষায় আস্থার জায়গা তৈরি করেছে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের সনাক্তকরণ, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নির্ণয়, নারী পাচার প্রতিরোধ, অভিবাসনসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং বিভিন্ন জাতীয় দুর্যোগে মৃতদেহ শনাক্তকরণে এই ল্যাব অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
দীর্ঘ ১৯ বছরের অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
২০০৬ সাল থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ১০,৮৪৫টি মামলার ২৩,১৩২টি নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান করেছে এই ল্যাব। উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে—
২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিচয় শনাক্তকরণ,
-
২০১২ সালের তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি,
-
২০১৩ সালের রানা প্লাজা দুর্ঘটনাতে নিহত শ্রমিকদের পরিচয় সনাক্তকরণ।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আস্থা অর্জন করা এই ল্যাব বর্তমানে Asian Forensic Sciences Network (AFSN) এবং Y Chromosome Haplotype Reference Database (YHRD)-এর সদস্য। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের FBI এবং অন্যান্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীরা এখানে কাজ করছেন।
আইনি স্বীকৃতি ও গুরুত্ব
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ৩ ও ৪৫ (ক) এবং সংশোধনী আইন, ২০২২ অনুযায়ী ধর্ষণ, হত্যা, মাতৃত্ব-পিতৃত্ব নির্ণয়সহ গুরুতর অপরাধের মামলায় ডিএনএ রিপোর্টকে বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রদানকারীদের আদালতে সাক্ষ্য দিতেও হয়। ফলে বিচার ব্যবস্থার গতি ও স্বচ্ছতা বাড়াতে এই ল্যাব কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
সম্প্রসারণ উদ্যোগ
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত ডিএনএ ল্যাব ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশের CID ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ‘ডিএনএ আইন, ২০১৪’ ও ‘বিধিমালা ২০১৮’ অনুযায়ী ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরই জাতীয় নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
বর্তমানে সারাদেশে স্থাপিত ৮টি ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবকে পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইলিং ল্যাবে উন্নীত করার কাজ চলছে, যা তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।
সচিবের আহ্বান
সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন,
"ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার সেবা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান অপরিহার্য। এ উদ্যোগ ফরেনসিক ডিএনএ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে।"
এই উদ্যোগের ফলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনসহ দেশের সামগ্রিক বিচারব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মমতাজ আহমেদ এনডিসি
সিনিয়র সচিব
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
বিষয়: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী এর কার্যক্রম অবহিতকরণ।
প্রিয় সহকর্মী
তারিখঃ ২৭ আগষ্ট ২০২৫
আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন 'নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স বা ড্যানিডার আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের সর্বপ্রথম ও আন্তর্জাতিক মানের ডিএনএ ল্যাব 'ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি'। দেশব্যাপী এই সুবিধা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে পরবর্তীতে, পর্যায়ক্রমে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরী (চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ) স্থাপিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে 'ডিএনএ আইন, ২০১৪' এবং 'ডিএনএ বিধিমালা, ২০১৮' প্রণয়ন করা হয়। ডিএনএ আইনের বাস্তবায়নে ০৯ আগস্ট, ২০২০ খ্রিঃ তারিখে 'ডিএনএ ল্যাবরেটরী ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা বর্তমানে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে দেশের বিচার, তদন্ত ও মানবাধিকার সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
২। ডিএনএ ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর হতে অদ্যাবধি সারাদেশে হত্যা বা ধর্ষণের মত সহিংস অপরাধ দমনে অভিযুক্ত খুনি/ধর্ষক সনাক্তকরণ, পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নির্ণয়, মৃত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্তকরণ, নারী পাচাররোধ ও অবৈধ অভিবাসী প্রতিরোধে বিদেশি দূতাবাসমূহের অধিযাচনে ডিএনএ পরীক্ষা সম্পাদন, জেন্ডার নির্ধারণ, অভিবাসন সংক্রান্ত (বিদেশ গমনেচ্ছুক) প্রয়োজনীয় ডিএনএ পরীক্ষা সম্পাদন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্পর্কিত ও বিভিন্ন দুর্যোগে মৃতদেহ সনাক্তকরণে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী ডিএনএ পরীক্ষা সম্পাদন করে আসছে।
৩। আপনি আরও অবগত রয়েছেন যে, ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী ২০০৬ খ্রি: থেকে মার্চ ২০২৫ খ্রি: পর্যন্ত মোট ১০,৮৪৫ টি মামলার ২৩,১৩২ টি নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান করেছে। এছাড়াও, বিভিন্ন জাতীয় দুর্যোগে সফলতার সাথে যেমন, ২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নিহত সেনা কর্মকর্তার পরিচয় সনাক্তকরণ, ২০১২ সালের তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডিতে নিহত শ্রমিকের পরিচয় সনাক্ত করণ, ২০১৩ সালের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পরিচয় সনাক্ত করে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ডিএনএ রিপোর্ট প্রদান করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আস্থার জায়গা সৃষ্টি করেছে।
৪। ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী এর কর্মকর্তাগণ কর্তৃক বিচারিক আদালতের ডিএনএ টেস্টের পাশাপাশি ৩০টিরও অধিক গবেষণাপত্র স্বনামধন্য দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত ল্যাবের বিজ্ঞানীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের FBI এবং দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যারা দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আজ এই ল্যাব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, যা Asian Forensic Sciences Network (AFSN) এবং Y Chromosome Haplotype Reference Database (YIIRD)-এর সদস্য।
৫। উল্লেখ্য যে, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতীতে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে যথাযথ রায় দেয়া সম্ভব হতো না। বর্তমানে এসব মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হওয়ায় বিচার কার্যক্রমে গতি এসেছে।
৬। তদুপরি, সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ৩ ও ৪৫ (ক) এবং এর পরিমার্জিত সংশোধনী আইন, ২০২২-এর ধারা ৯ অনুযায়ী ধর্ষণ, হত্যা, মাতৃত্ব-পিতৃত্ব নির্ণয়সহ অন্যান্য গুরুতর অপরাধের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টকে বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে এবং রিপোর্টকারী ব্যক্তিকে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করতে হয়। ফলে, বিচার ব্যবস্থায় সুষ্ঠু কার্যক্রমে ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের গুরুত্ব অপরিসীম।
৭। আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুমোদনক্রমে ডিএনএ আইন, ২০১৪ এর ধারা ১৪ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবং উপ-ধারা (২) এর বিধান মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উদ্দ্যোগে ২০১৫ সালে 'ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরী অব বাংলাদেশ পুলিশ' নামে একটি ডিএনএ ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। উপরোক্ত আইন ও বিধিমালায় 'ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর' কে ডিএনএ সংক্রান্ত জাতীয় নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং একইসাথে বাংলাদেশ পুলিশের 'CID ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিসহ' দেশের সকল ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির তদারকি, মাননিয়ন্ত্রণ ও আইনানুগ দিকনির্দেশনার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
৮। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ডিএনএ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায়ধীন ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। এছাড়া তদন্ত ও বিচার কার্যক্রমকে সহায়তা করার জন্য বর্তমানে ৮টি ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরিকে পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইলিং ল্যাবে উন্নীত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
৯। এমতাবস্থায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মানের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরীর মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার সেবা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অবহিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানে আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। আপনার এ উদ্যোগ ফরেনসিক ডিএনএ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আপনার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করছি।
স্বাক্ষরিত
মমতাজ আহমেদ এনডিসি
সিনিয়র সচিব
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
No comments
Your opinion here...