ad

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির পথে অগ্রগতি

Views

 


সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির পথে অগ্রগতি

👉প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১০ম গ্রেডে বেতন! বঞ্চিত ৬৫ হাজার শিক্ষক এবার সমতা চান


বিশেষ প্রতিবেদন
তারিখ: ২৬ জুলাই ২০২৫

ঢাকা: দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা শীঘ্রই জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনার মুখে রয়েছেন। এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পত্র সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে প্রাথমিক পর্যায়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার পর এবার ৬৫ হাজারেরও বেশি প্রধান শিক্ষক একই দাবিতে যুক্তিসংগতভাবে সামনে আসছেন।

আদালতের আদেশের পটভূমি:

২০১৮ সালে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক রিট পিটিশন নং-৩২১৪/২০১৮ দাখিল করেন, যেখানে তারা দাবি করেন যে, প্রধান শিক্ষক পদটি ২০১৪ সালে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় তারা ১১তম গ্রেডের পরিবর্তে ১০ম গ্রেড পাওয়ার যোগ্য। হাইকোর্ট এই রিটের পক্ষে রায় দিলে সরকার আপিল করে, যা পরবর্তীতে খারিজ হয়। সবশেষে, ২০২২ সালের সিভিল রিভিউ পিটিশন নং-১২৪/২০২২-এ সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, রিট আবেদনকারী ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক ১০ম গ্রেডে উন্নীত হবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সীমিত সম্মতি:

উক্ত রায়ের ভিত্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগে সব প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কেবলমাত্র রায়ে উল্লেখিত ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য সম্মতি দেয়। ফলে বাকি প্রায় ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, যার ফলে মাঠপর্যায়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

আর্থিক প্রভাব:

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে কর্মরত ৩১,৩৯৬ জন প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করলে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১০৬.৭২ কোটি টাকা। অপরদিকে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৩৪,১০৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করলে বার্ষিক ব্যয় দাঁড়াবে ২৪২.৬০ কোটি টাকা

মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ:

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, আদালতের আদেশের আলোকে কেবল ৪৫ জনকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করায় বেতন বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ফলে সকল প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা জরুরি। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি এবং প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

শিক্ষক মহলের প্রতিক্রিয়া:

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক প্রধান শিক্ষক মনে করছেন, এটা কেবল রায়ের বিষয় নয়, বরং পদের মর্যাদা ও দায়িত্বের স্বীকৃতি। অনেকেই বলেছেন, “একই পদে থেকে একদল শিক্ষক উচ্চ গ্রেডে আর অন্যরা নিম্ন গ্রেডে থাকলে সেটি প্রান্তিক পর্যায়ে নেতৃত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”


উপসংহার:

সকল প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এটি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে এই দাবি বাস্তবায়নের পথ কতটা সহজ হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

বিদ্যালয়-২ শাখা

www.mopme.gov.bd

নম্বর- ৩৮.০০.০০০০.০০৮.০২.০১৩.২১-৩৩৭

তারিখ:- ০৭ শ্রাবণ ১৪৩২

২২ জুলাই ২০২৫

বিষয়ঃ মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের ১২৪/২০২২ নং সিভিল রিভিউ পিটিশন এর রায়ের আলোকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এর ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) জন প্রধান শিক্ষকের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সকল প্রধান শিক্ষক পদ জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ।

সূত্র: ১। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর- ৩৮.০০.০০০০.০০৮.০২.০১৩.২১-২৪৬ তারিখ: ০৮.০৫.২০২৫।

২। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পত্র নং- নং-০৭.০০.০০০০.০০০.১৬১.০৪.০০০৭.২৫-৯০ তারিখ: ১৯.০৬.২০২৫।

উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৬৫৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে অনুমোদিত প্রধান শিক্ষক পদ ৬৫৫০২টি। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ৩১৫৯৬ জন এবং শূন্য পদ ৩৪১০৬টি। প্রধান শিক্ষকের পদটি গত ০৯ মার্চ ২০১৪ তারিখে ৩য় শ্রেনি থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীতকরণপূর্বক বেতন গ্রেড ১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম (প্রশিক্ষণবিহীন) করা হয়। বেতনগ্রেড ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক তাদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবীতে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং ৩২১৪/২০১৮ দায়ের করেন। উক্ত মামলায় পিটিশনারগণের পক্ষে রায় প্রদান করা হলে এ রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য আপীল বিভাগে লিভ টু আপীল ৩৫৬৪/২০১৯ দায়ের করা হয়। বর্ণিত মামলায় নিম্নরূপ আদেশ প্রদান করা হয়।

"Let the leave petition be posted for hearing in the list on 3rd February. 2020 and stay, as prayed for, is granted till that date"

০২। পরবর্তীতে রিট পিটিশন নং- ৩২১৪/২০১৮ থেকে উদ্ভুত সিপিএলএ নং-৩৫৬৪/২০১৯ এর খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ কর্তৃক সিডিল রিভিউ পিটিশন নং-১২৪/২০২২ দায়ের করা হয়। উক্ত সিভিল রিভিউ পিটিশন-এ নিম্নরূপ আদেশ প্রদান করা হয়:

"The judgment and order dated 25.02.2019 passed by the High Court Division in writ petition No 3214 of 2018 is modified to the extent that the writ petitioners-respondents shall not be entitled to selection grade and time scale benefits upon completion of 4. 8 and 12 years of service. However, this shall not bar them from receiving future benefits if selection grade and time scale are reintroduced.

With the above modification the Civil Review petition no. 124 of 2024 is disposed of."

০৩। বর্ণিত আদেশের প্রেক্ষিতে রিট আবেদনকারী ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) জন প্রধান শিক্ষকের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে সম্মতি প্রদানের জন্য সূত্রোক্ত ১ নং স্মারকে অর্থ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয় এবং একইসাথে অবশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সূত্রোক্ত ২ নং স্মারকে অর্থ বিভাগ হতে উল্লিখিত ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) জন প্রধান শিক্ষকের বিদ্যমান বেতন গ্রেড-১১ হতে ১০ম গ্রেডে উত্তীরকরণে সম্মতি জ্ঞাপন করা হয়।

০৪। প্রসঙ্গত, ৬৫,৫০২ (পঁয়ষট্টি হাজার পাঁচশত দুই)টি প্রধান শিক্ষক পদের মধ্যে আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে শুধু ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) জনকে ১০ম গ্রেডে এ উন্নীতকরণের ফলে প্রধান শিক্ষকগণের মধ্যে বেতন বৈষম্যের কারণে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ কারণে অবশিষ্ট ৬৫,৪৫৭ (পঁয়ষট্টি হাজার চারশত সাতান্ন) টি সহ প্রধান শিক্ষকের পদ ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে প্রধান শিক্ষক পদ ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার ক্ষেত্রে আর্থিক সংশ্লেষ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয় (কপি সংযুক্ত)। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কর্মরত ৩১,৩৯৬ (একত্রিশ হাজার তিনশত ছিয়ানরাই। জন প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত বেতন-ভাতাদি বাবদ বার্ষিক মোট অতিরিক্ত ১০৬,৭২,৮৭,৮৪০/- (একশত ছয় কোটি বাহাত্তর লক্ষ সাতাশি হাজার আটশত চল্লিশ) টাকার বরাদ্দ প্রয়োজন হবে।

এছাড়া প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ যোগ্য ৩১,৪৫৯ (একত্রিশ হাজার চারশত উনষাট) টি এবং সরাসরি নিয়োগ যোগ্য ২৬৪৭ (দুই হাজার ছয়শত সাতচল্লিশ) টি মোট ৩৪,১০৬ (চৌত্রিশ হাজার একশত ছয়) টি শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হলে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ বাবদ অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে ২৪২,৬০,৬৩,৮০০/- (দুইশত বিয়াল্লিশ কোটি ষাট লক্ষ তেষট্টি হাজার আটশত) টাকা।

০৫। এমতাবস্থায়, মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের সিভিল রিভিউ পিটিশন নং-১২৪/২০২২ এ প্রদত্ত আদেশের আলোকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) জন প্রধান শিক্ষকের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সকল প্রধান শিক্ষক পদ জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণে সদয় সম্মতি জ্ঞাপনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একই সঙ্গে কর্মরত প্রধান শিক্ষকগণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও অনুরোধ করা হলো।

সংযুক্তি: বর্ণনামতে ০৩ (তিন) পাতা।

স্বাক্ষরিত

রেবেকা সুলতানা

যুগ্মসচিব

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। 




No comments

Your opinion here...

Theme images by fpm. Powered by Blogger.