চাকরিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকারি চাকরি আইনে নতুন ধারা ৩৭ক। চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫।
চাকরিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকারি চাকরি আইনে নতুন ধারা ৩৭ক। চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫।
👉চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫।
👉সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নতুন অধ্যাদেশ জারি – বরখাস্ত, অবসর ও অবনমনের বিধান অন্তর্ভুক্ত
📰 বিশেষ অনুবাদ প্রতিবেদন | তারিখ: ২৩ জুলাই ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ২৩ জুলাই ২০২৫ (০৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) তারিখে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছেন।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৭ক নতুনভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা। অধ্যাদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
🔍 নতুন ধারা ৩৭ক এর মূল বিষয়বস্তু:
✅ কোন আচরণ ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে?
১. ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করা বা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করা
২. ছুটি বা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কর্মস্থলে সমবেতভাবে অনুপস্থিত থাকা
৩. অন্য কর্মচারীকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা
এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে “সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
⚖️ শাস্তির ধরনসমূহ:
এই অসদাচরণের জন্য নিম্নলিখিত তিনটি শাস্তি আরোপের বিধান রাখা হয়েছে:
(ক) পদাবনতি বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ
-
(খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান
-
(গ) চাকরি থেকে বরখাস্ত
📝 তদন্ত ও শুনানির ধাপসমূহ:
অভিযোগ গঠন ও কারণ দর্শানোর জন্য ৭ কার্যদিবসের সময়
-
অভিযোগ গঠনের পর ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন
-
তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে (একবারের জন্য ৭ দিন বাড়ানো যাবে)
-
নারী অভিযুক্ত হলে কমিটিতে অবশ্যই নারী সদস্য রাখতে হবে
-
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত না করলে কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তা PMIS ও ডোসিয়ারে লিপিবদ্ধ থাকবে
📤 আপিল ও পুনর্বিবেচনার সুযোগ:
দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করা যাবে
-
রাষ্ট্রপতির আদেশের ক্ষেত্রে আপিল করা যাবে না, তবে রিভিউ আবেদন করা যাবে
-
আপিল বা রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে
🧾 সারাংশ:
এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার ফলে সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলাবিধি আরও কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন হবে। শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের ঘটনায় তদন্ত ও শাস্তির প্রক্রিয়াটি এখন হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে। একইসাথে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অদক্ষতা বা বিলম্বের ক্ষেত্রেও রয়েছে শাস্তির বিধান।
📌 বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ:
এই অধ্যাদেশটি সংসদ ভেঙে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারি করা হয়েছে।
প্রকাশিত:
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সচিব: ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী
রাষ্ট্রপতি: মোঃ সাহাবুদ্দিন
বাংলাদেশ গেজেট
অতিরিক্ত সংখ্যা
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত
বুধবার, জুলাই ২৩, ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ
মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা
বিজ্ঞপ্তি
তারিখ: ০৮ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ/ ২৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ।
নং ৩৭ (মুঃ ও প্রঃ)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ০৮ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ/২৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে প্রণীত নিম্নে উল্লিখিত অধ্যাদেশটি এতদ্দ্বারা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হইল।
অধ্যাদেশ নং ৩৭, ২০২৫
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত
অধ্যাদেশ
যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণকল্পে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; এবং
যেহেতু সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট ইহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে;
সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিলেন:-
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন। (১) এই অধ্যাদেশ সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন)
অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। ২০১৮ সনের ৫৭ নং আইনের ধারা ৩৭ক এর সংশোধন। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮
(২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ৩৭ক এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা ৩৭ক প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-
"৩৭ক। সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দন্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান। (১) এই আইন বা এই
আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী
(ক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা উহার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এই সকল কার্যে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, অথবা
(খ) ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ব্যতীত অন্যান্য কর্মচারীদের সহিত সমবেতভাবে নিজ কর্ম হইতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন, অথবা
(গ) যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাহার কর্মে উপস্থিত হইতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন,
তাহা হইলে উহা হইবে সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যেকোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কর্মের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে নিম্নবর্ণিত যেকোনো দণ্ড প্রদান করা যাইবে, যথা:-
(ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ;
(খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; এবং
(গ) চাকরি হইতে বরখাস্ত।
(৩) যেক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কোনো অসদাচরণের জন্য কার্যধারা গ্রহণ করা হয়, সেইক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অথবা এতদুদ্দেশ্যে তৎকর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, অভিযোগ গঠন করিবেন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীকে, অতঃপর অভিযুক্ত ব্যক্তি বলিয়া অভিহিত, কেন এই ধারার অধীন দোষী সাব্যস্তপূর্বক দণ্ড আরোপ করা হইবে না এই মর্মে ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথভাবে কারণ দর্শাইবার নোটিশ প্রদান করিবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হইয়া শুনানি করিতে ইচ্ছুক কি না ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাহাও উক্ত নোটিশে উল্লেখ করিবেন।
(৪) অভিযুক্ত কারণ দর্শাইলে উহা বিবেচনার পর এবং, ক্ষেত্রমত, তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে উপস্থিত হইলে শুনানি গ্রহণের পর, যদি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণ করিবার মতো পর্যাপ্ত ভিত্তি রহিয়াছে, অথবা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত কারণ না দর্শাইয়া থাকেন, তাহা হইলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি তদন্তের জন্য ৩ (তিন) দিনের মধ্যে ৩ (তিন) সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করিবেন।
(৫) তদন্ত কমিটির সদস্যগণকে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপেক্ষা কর্মে জ্যেষ্ঠ হইতে হইবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি নারী হইলে তদন্ত কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে।
(৬) তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হইতে পরবর্তী ১৪ (চৌদ্দ) কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করিয়া প্রতিবেদন দাখিল করিতে হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, যুক্তিসংগত কোনো কারণে উক্ত সময়সীমা বৃদ্ধির প্রয়োজন হইলে উহা কেবল একবারের জন্য অনধিক ৭ (সাত) কার্যদিবস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাইবে।
(৭) তদন্ত কমিটি উপ-ধারা ৬ এ বর্ণিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করিতে না পারিলে নূতন তদন্ত কমিটি গঠন করিতে হইবে এবং উক্ত নূতন তদন্ত কমিটি উপ-ধারা ৬ এ বর্ণিত সময়সীমা অনুযায়ী তদন্ত সম্পন্ন করিবে।
(৮) তদন্ত কমিটি যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করিতে ব্যর্থ হইলে উহা তদন্ত কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হইবে এবং এইরূপ অদক্ষতার বিষয়টি, ক্ষেত্রমত, তাহাদের সরকারি কর্মচারী বাতায়ন (GEMS) এর Personnel Management Information System (PMIS) এবং ডোসিয়ারে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষিত হইবে এবং চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাহাদের বিরুদ্ধে দণ্ডমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে।
(৯) তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি উহা বিবেচনা করিবে, অভিযোগ, ও ক্ষেত্রমত, দণ্ডের বিষয়ে উহার সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করিবে এবং উক্ত সিদ্ধান্ত, তদন্ত প্রতিবেদনের কপিসহ, অভিযুক্তকে যথাযথভাবে প্রেরণ করিবে।
(১০) উপ-ধারা (৯) এর অধীন কোনো সরকারি কর্মচারীকে দণ্ড প্রদান করা হইলে, তিনি দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ধারা ৩৪ এর অধীন আপিল করিতে পারিবেন এবং আপিল কর্তৃপক্ষ উক্ত আদেশ বহাল রাখিতে, বাতিল করিতে বা পরিবর্তন করিতে পারিবে।
(১১) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাইবে না, তবে এইরূপ ক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৩৬ অনুযায়ী উক্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার (review) জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করিতে পারিবেন এবং রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবেন, সেইরূপ আদেশ প্রদান করিবেন।
(১২) উপ-ধারা (১০) ও (১১) এর অধীন, যথাক্রমে, আপিল ও রিভিউ এ প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।”।
মোঃ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী
সচিব।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
No comments
Your opinion here...