Views
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং চালু: ১৫০ উপজেলায় একযোগে কার্যক্রম শুরু
👉সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার বিতরণ শুরু: ১৫০ উপজেলায় চালু হলো ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমান উন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি বৃহৎ প্রকল্প চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে দেশের ৮টি বিভাগের ৬২টি জেলার ১৫০টি উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই কর্মসূচির আওতায় বিদ্যালয় চলাকালীন প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে পুষ্টি সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন অনুযায়ী খাদ্য বিতরণ সারণি নিম্নরূপ:
-
রবিবার: বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম
-
সোমবার: বনরুটি ও ইউএইচটি দুধ
-
মঙ্গলবার: বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম
-
বুধবার: ফটিফাইড বিস্কুট ও কলা/স্থানীয় মৌসুমী ফল
-
বৃহস্পতিবার: বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি, একাগ্রতা বৃদ্ধি এবং পুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানো হয়, "এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।"
এছাড়া, প্রকল্প সংক্রান্ত একটি সংযুক্ত তালিকায় ১৫০টি নির্বাচিত উপজেলার নাম উল্লেখ রয়েছে, যেখানে কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হবে।
উল্লেখ্য, সরকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি আগ্রহও বৃদ্ধি করতে চায়। এটি শিশুদের ভবিষ্যৎ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬
স্মারক নং- ৩৮,০১,০০০০,০১২,৯৯,০০৯.২৫-২০
তারিখ: ০৮ আষাঢ়, ১৪৩২
২২ জুন, ২০২৫
বিষয়: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি শীর্ষক প্রকল্প কার্যক্রম অবহিতরকরণ সংক্রান্ত।
উপর্যুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক দেশের ৮টি বিভাগের ৬২টি জেলায় নির্বাচিত ১৫০টি উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর জন্য "সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি" শীর্ষক প্রকল্প বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে। এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য বিদ্যালয় চলাকালীন প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের মাঝে পুষ্টি সমৃদ্ধ ফটিফাইড বিস্কুট, ইউএইচটি মিল্ক, বনরুটি, সিদ্ধ ডিম ও কলা/স্থানীয় মৌসুমী ফল নিম্নবর্ণিতভাবে বিতরণ করা।
সাপ্তাহিক বিদ্যালয় দিবসঃ খ্যাদ্য সামগ্রী বিতরণঃ
রবিবারঃ বনরুটি এবং সিদ্ধ ডিম
সোমবারঃ বনরুটি এবং ইউএইচটি দুধ
মঙ্গলবারঃ বনরুটি এবং সিদ্ধ ডিম
বুধবারঃ ফটিফাইড বিস্কুট এবং কলা/স্থানীয় মৌসুমী ফল
বৃহস্পতিবারঃ বনরুটি এবং সিদ্ধ ডিম
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক পুষ্টিমান ও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে বির্ণিত স্কুল ফিডিং কর্মসূচি সুষ্ঠু, সঠিক ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ, জেলা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
বর্ণিত অবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি শীর্ষক প্রকল্পটির কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিতকরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
সংযুক্তি: বিভাগ ও জেলা ভিত্তিক নির্বাচিত ১৫০টি উপজেলার তালিকা।
স্বাক্ষরিত
(মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ)
(যুগ্ম সচিব)
প্রকল্প পরিচালক
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
জুলাইয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি
দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী জুলাই মাস থেকে চালু হতে যাচ্ছে দুপুরের খাবার কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন শিশুদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করা হবে। খাবারের তালিকায় থাকবে ডিম, দুধ, পাউরুটি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল। এটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে দুটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে।
সরকারের অর্থায়নে চালু হতে যাওয়া প্রকল্পটি ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে, যেখানে রয়েছে ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই উপজেলাগুলোর মধ্যে ৯১ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩৫টি উপজেলা অতি উচ্চ বা উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে শিক্ষা ও পুষ্টি উভয়ই সংকটে রয়েছে। বাকি ১৪টি উপজেলা নিম্ন দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় পড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক ২০২৩ সালে প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের ভিত্তিতে এই দারিদ্র্য শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত হবে।
অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত অপর প্রকল্পটি কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ১৫টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৫৬৯টি এবং বান্দরবানে ৪৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত, সর্বমোট এক হাজার ৯৫টি বিদ্যালয়। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার শিক্ষার্থী। এ প্রকল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থানরত মিয়ানমারের উদ্বাস্তু শিশুদেরও এই কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে, যা সামাজিক অন্তর্ভুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
স্কুল ফিডিং কর্মসূচি আগামী জুলাই মাস থেকে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও কোনো কারণবশত নির্ধারিত সময়ে শুরু করা না গেলে, আগস্ট থেকে কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। ইতোমধ্যে উভয় প্রকল্পের জন্য প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠিত হবে, যারা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।
খাবারের সুনির্দিষ্ট তালিকাও ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা খাদ্য পাবে। রবিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের একটি করে ডিম এবং ১২০ গ্রাম ওজনের বান দেওয়া হবে। সোমবার থাকবে ২০০ মিলিলিটার ইউএইচটি দুধ এবং একটি বান। বুধবার দেওয়া হবে ৭৫ গ্রাম ওজনের একটি বিস্কুট ও ১০০ গ্রাম সাইজের একটি কলা অথবা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাওয়া মৌসুমি ফল। প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকায় মোট এনার্জির ২৫ দশমিক নয় শতাংশ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ৩২ দশমিক দুই শতাংশ, প্রোটিনের ১৬ দশমিক চার শতাংশ এবং ফ্যাটের ২১ দশমিক সাত শতাংশ সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, অপুষ্টিজনিত সমস্যা হ্রাস এবং শিক্ষায় মনোযোগ ধরে রাখা। একইসাথে এটি সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মানা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে ডিম, বান ও কলার মতো খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো আমাদের শিশুদের প্র্যাকটিক্যাল প্রয়োজন। অনেক পরিবার আর্থিক অক্ষমতার কারণে এসব প্রয়োজনীয় খাদ্য তাদের সন্তানদের দিতে পারে না। তাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো, শিশুদের দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে ধরে রাখা, দুপুরে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করা এবং অপুষ্টির প্রতিকার করা। কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথম স্কুল ফিডিং কর্মসূচির সূচনা হয়। তা ২০১০ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল। এরপর ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় আরো একটি পৃথক স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু ছিল, যার আওতায় শিক্ষার্থীদের শুধু উচ্চমানসম্পন্ন বিস্কুট সরবরাহ করা হতো। নতুন প্রকল্পটি আগের চেয়ে আরও উন্নত ও পুষ্টিনির্ভর এবং এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।




No comments
Your opinion here...