ad

প্রাথমিক স্তরের মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৫

Views

 


প্রাথমিক স্তরের মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৫

ভূমিকা মূল্যায়ন শিক্ষাক্রমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কার্যকর মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রনয়ণের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর উদ্যোগে মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, বিষয় বিশেষজ্ঞ, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক, পেডাগগ, শিক্ষক প্রশিক্ষক এবং প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে প্রাথমিক স্তরের মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। মূল্যায়ন নির্দেশিকা-২০২৫ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এনসিসিসি)-এর সিদ্ধান্ত এবং ২০২৫ সালে পরিমার্জিত জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ (প্রাথমিক স্তর) এর মূল্যায়ন অংশে বর্ণিত কাঠামোকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, শিক্ষাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধারাবাহিক (১০০%), তৃতীয় শ্রেণিতে ধারাবাহিক (৬০%) ও সামষ্টিক (৪০%) এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ধারাবাহিক (৪০%) ও সামষ্টিক (৬০%) মূল্যায়ন বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরিচালনার জন্য এ নির্দেশিকায় সাধারণ নির্দেশনার পাশাপাশি রেকর্ড সংরক্ষণ ও শিখন অগ্রগতি প্রতিবেদন অর্থাৎ রিপোর্ট কার্ড প্রস্তুতের পদ্ধতি, উদাহরণসহ রেকর্ড সংরক্ষণ ছক এবং শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি প্রতিবেদ/রিপোর্ট কার্ডের নমুনা সংযোজন করা হয়েছে। শিক্ষক যেন সহজে শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করতে পারেন এবং অভিভাবককে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি বিষয়ে যথাযথভাবে অবহিত করতে পারেন সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নকালে শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে এবং শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত নিয়ে প্রয়োজনে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য এই মূল্যায়ন নির্দেশিকাটি পরিমার্জন করা যেতে পারে। সরকারি, বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসাসহ প্রাথমিক শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে শিখন-শেখানো কৌশল ও মূল্যায়নের জন্য একই পদ্ধতি অনুসৃত হলে শিক্ষার্থীদের শিখন এবং সুষম ও সমন্বিত বিকাশ সহজতর হবে।

প্রাথমিকস্তরে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের ধারণা শিক্ষাবিজ্ঞানের তত্ত্ব, বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফল এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা কার্যক্রমের ধারা (global trend) অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, এই স্তরের শিশুদের টেকসই শিখন (sustainable learning) এবং সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ধারাবাহিক মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে একজন শিশুর শিখন অবস্থান সম্পর্কে যে ধারণা রাখেন, তা কয়েক ঘন্টার সামষ্টিক মূল্যায়নে নিরূপন করা সম্ভব নয়। এছাড়াও জ্ঞান বিকাশের তত্ত্ব অনুযায়ী প্রাথমিক শিশুদের জন্য শুধু প্রান্তিকভাবে অনুষ্ঠিত সামষ্টিক মূল্যায়ন বিজ্ঞানসম্মত নয়; এতে শিশুর প্রকৃত শিখন অর্জন যথাযথভাবে নির্ণয় সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায়, বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে প্রাথমিক স্তরে গাঠনিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের যৌক্তিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন গাঠনিক (formative) ও সামষ্টিক (summative) হতে পারে। দৈনন্দিন পাঠদান কার্যক্রম চলাকালে শিশুদের 'শিখনকালীন' ভুল-ত্রুটি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে ফলাবর্তনের (feedback) মাধ্যমে তাদের শিখন-উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিকভাবে গাঠনিক মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ। এই মূল্যায়নকে নির্দেশিকায় 'শিখনকালীন মূল্যায়ন' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শিখনকালীন মূল্যায়ন অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রমের মাধ্যমেই হবে। এজন্য আয়োজন করে কোনো টেস্ট/পরীক্ষা নেয়া যাবে না। অন্যদিকে, বছরের নির্দিষ্ট প্রান্তিকে একজন শিশুর শিখন অবস্থান বোঝার জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন অপরিহার্য। সামষ্টিক মূল্যায়ন বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধারাবাহিক মূল্যায়নকে 'শিখনকালীন মূল্যায়ন (শি.মূ.)' ও 'অধ্যায়ভিত্তিক মূল্যায়ন (অ.মূ.)' ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে শতভাগ (১০০%) ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে এবং কোনো সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে না। এমতাবস্থায়, একটি অধ্যায় বা পাঠগুচ্ছ শেষে যে অধ্যায়ভিত্তিক মূল্যায়ন (অ.মূ.) করা হবে, তা অনেকটা ঐ অধ্যায়ের জন্য সামষ্টিক মূল্যায়ন হিসেবে পরিগণিত হবে। তবে এটি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় আনুষ্ঠানিকভাবে হবে না; বরং বিষয় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ক্লাস রুটিনে উল্লিখিত সময়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হবে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। ধারাবাহিক মূল্যায়নে 'অধ্যায়ভিত্তিক শিখনকালীন মূল্যায়ন (অ.শি.মু.) পরিচালিত হবে বিষয় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবে। শিক্ষক এই মূল্যায়নের নম্বরভিত্তিক রেকর্ড এবং প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন। 'অধ্যায়ভিত্তিক শিখনকালীন মূল্যায়ন (অ.শি.মু.) পরিচালনার সময় একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভুল-ত্রুটি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে 'মন্তব্য' আকারে লিখে রাখবেন এবং তা উন্নয়নের প্রচেষ্টা নেবেন। অন্যদিকে, বছরে নির্ধারিত তিনটি প্রান্তিকে সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। সামষ্টিক মূল্যায়ন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকের সামষ্টিক মূল্যায়নের ফলাফল এবং শিক্ষার্থীদের দুর্বলতাগুলো শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে অবগত করতে হবে এবং ফিডব্যাক প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।




Full PDF Download

No comments

Your opinion here...

Theme images by fpm. Powered by Blogger.