ad

শিক্ষাক্রম বিস্তরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ-২০২৩ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় তথ্য

Views

 


শিক্ষাক্রম বিস্তরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ-২০২৩ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় তথ্য
💥শিক্ষাক্রমের মূলনীতি:
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ, একীভূত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন, বহুমাত্রিক, যোগ্যতাভিত্তিক,সক্রিয় ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন,প্রাসঙ্গিক ও নমনীয়,জীবন ও জীবিকা সংশ্লিষ্ট, অংশগ্রহণমূলক, শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক ও আনন্দময়।
💥রূপকল্প:
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উউজ্জীবিত দেশপ্রেমিক,উৎপাদনমুখী,অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তোলা।
💥অভিলক্ষ্য:
👉সকল শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভবনা বিকাশে কার্যকর ও নমনীয় শিক্ষাক্রম।
👉শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর বিকাশ ও উৎকর্ষের সামাজিক কেন্দ্র।
👉প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের বাহিরেও বহুমাত্রিক শিখনের সুযোগ ও স্বীকৃতি।
👉সংবেদনশীল, জবাবদিহিমূলক একীভূত ও অংশগ্রহণ মূলক শিক্ষা ব্যবস্থা।
👉শিক্ষা ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে দায়িত্বশীল,স্ব-প্রণোদিত,দক্ষ ও পেশাদার জনশক্তি।
💥জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা:
প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি।
💥শিক্ষাক্রম:
শিক্ষাক্রমের ইংরেজি পরিভাষা হলো কারিকুলাম (curriculum)। Curriculum শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ‘currere’ থেকে। ল্যাটিন শব্দ ‘currere’ অর্থ ‘পাঠ্যসূচি’ বা ‘course of study’। কেউ কেউ মনে করেন এটি ল্যাটিন শব্দ ‘currer’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘ঘোড় দৌড়ের মাঠ’।
শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিন্যস্ত পরিকল্পনাকে বলা হয় শিক্ষাক্রম। যা কোন সংস্থা বা সরকার কর্তৃক গৃহীত। কোনো একটি শিক্ষা কার্যক্রম কী উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কী বিষয়বস্তুর মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জিত হবে; কখন, কীভাবে, কার সহায়তায় এবং কী উপকরণের সাহায্যে তা বাস্তবায়িত হবে, শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে এসবের যাবতীয় পরিকল্পনার রূপরেখাকে শিক্ষাক্রম বলে।
💥শিক্ষক্রমের স্তর বিন্যাস:
১। প্রাক প্রাথমিক (Preparation) প্রস্তুতি
২। প্রাথমিক (Foundation) ভিত্তি
৩। মাধ্যমিক (Socialization) সামাজিকীকরণ
৪। উচ্চ মাধ্যমিক (Towards Specialization) বিশেষায়ণের জন্য প্রস্তুতি
৫। উচ্চ শিক্ষা (Specialization) বিশেষায়ণ।
শিক্ষাক্রমে মূল যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টি। শিখন ক্ষেত্র ১০টি। প্রাথমিকস্তরের বিষয় ৮ টি।
💥শিখন ক্ষেত্র:
১। ভাষা ও যোগাযোগ
২। গণিত ও যুক্তি
৩। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
৪। ডিজিটাল প্রযুক্তি
৫। পরিবেশ ও জলবায়ু
৬। সমাজ ও বিশ্বনাগরিকত্ব
৭। জীবন ও জীবিকা
৮। মূল্যবোধ ও নৈতিকতা
৯। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা
১০। শিল্প ও সংস্কৃতি
💥প্রাথমিকস্তরের বিষয় ৮ টি
১। বাংলা
২। ইংরেজি
৩। গণিত
৪। সামাজিক বিজ্ঞান
৫। বিজ্ঞান
৬। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
৭। শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা
৮। শিল্পকলা
💥আবশ্যকীয় শিখনক্রম:
আবশ্যকীয় শিখনক্রম হচ্ছে যেটা শ্রেণি বা স্তর অনুযায়ী অবশ্যই পালনীয়। যাতে বিষয় ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা ও শ্রেণি ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা নির্ধারণ করা থাকে। শিক্ষার্থীর বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী আবশ্যকীয় শিখনক্রম নির্ধারিত হয়। যেমন প্রথম শ্রেণিতে ১ থেকে ৫০ পর্যন্ত শেখানো আবশ্যিক, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫১-১০০ পর্যন্ত শেখানো।
💥বিস্তৃত শিক্ষাক্রম:
বিস্তৃত শিক্ষাক্রমে বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা, শ্রেণিভত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা, শিখনফল,বিষয়বস্তু, শিখন শেখানো কৌশল, পদ্ধতি, পরিকল্পিত কাজ,মূল্যায়ন নির্দেশনার পদ্ধতি ও টুলস সব দেওয়া থাকে। অর্থাৎ বিস্তৃত শিক্ষাক্রম হলো যোগ্যতা নির্ধারণ থেকে যোগ্যতা অর্জন করানো পর্যন্ত সকল কার্যক্রমের বিস্তারিত বর্ণনা।
💥মূল্যায়ন পদ্ধতি:
১ম শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত ১০০% ধারাবাহিক মূল্যায়ন। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি ৬০% ধারাবাহিক মূল্যায়ন। ৪০% সামষ্টিক মূল্যায়ন।
💥ধারাবাহিক মূল্যায়ন:
বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলের মাধ্যমে শিখন শেখানো কার্যক্রমের শুরুতে,কার্যক্রম চলাকালীন এবং শেষে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়নের প্রক্রিয়াই হলো ধারাবাহিক মূল্যায়ন। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর জ্ঞান,দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়ন করা হয়।
💥ধারাবাহিক মূল্যায়নের উদ্দেশ্য:
১। শিক্ষার্থীকে তার শিখনে সহায়তা করা।
২। শিখন অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করে শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি বা উন্নয়নের ক্ষেত্র নিরুপণ করা এবং তার প্রতিকার করা।
৩। শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতির ক্ষেত্রগুলো কার্যকর ফলাবর্তন, পুন:মূল্যায়ন এবং নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করা।
💥ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রক্রিয়া বা ধাপ:
১। পরিকল্পনা প্রণয়ন।
২। মূল্যায়ন কৌশল ও টুলস নির্বাচন।
৩। মূল্যায়ন পরিচালনা ও তথ্য সংরক্ষণ।
৪। সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ ও কার্যকর ফলাবর্তন প্রদান।
💥ধারাবাহিক মূল্যায়নের বিভিন্ন কৌশল ও টুলস:
১। মৌখিক প্রশ্নোত্তর
২। লিখিত প্রশ্নোত্তর
৩। পর্যবেক্ষণ ( একক কাজ,জোড়ায় কাজ,দলগত কাজ,ইত্যাদি)
৪। সাক্ষাৎকার।
৫। স্ব-মূল্যায়ন।
৬। সতীর্থ/ সহপাঠী কর্তৃক মূল্যায়ন।
💥ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রয়োগক্ষেত্র সমূহ বা Domains:
১। জ্ঞান (Knowledge)
২। দক্ষতা (Skill)
৩। দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ (Attitude and Values)
💥উপক্ষেত্র:
জ্ঞানের উপক্ষেত্র জানা,অনুধাবন, ও প্রয়োগ
💥দক্ষতার উপক্ষেত্র সমূহ:
সৃজনশীলতা, সুক্ষ্মচিন্তন, যোগাযোগ ও সহযোগিতা।
💥মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির উপক্ষেত্র সমূহ:
সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা,আগ্রহ ও কৌতুহল।
💥ফলাবর্তন:
একজন দূর্বল বা অপরাগ শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি পূরণের জন্য শিক্ষক শিখন চলাকালীন বা শ্রেণি পাঠদানকালের বাহিরে যে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন তাই শিক্ষার্থীর জন্য ফলাবর্তন। ফলাবর্তন সব সময়ই পজিটিভ বা ইতিবাচক হয়ে থাকে। ফলাবর্তনের জন্য মানদণ্ড গুলোকে KSA দিয়ে প্রকাশ করতে হবে।
💥ফলাবর্তন কীভাবে দিবেন:
১। শিক্ষক নিজে ফলাবর্তন দিতে পারেন।
২। শিক্ষক পারগ সহপাঠীদের মাধ্যমে দূর্বল সহপাঠীকে ফলাবর্তন দিতে পারেন।
💥ফলাবর্তনের সময়:
১। পাঠ চলাকালীন অনুশীলন কালে।
২। পাঠ শেষে মূল্যায়নের সময়।
৩। পরবর্তী পাঠের শুরুতে পূর্বজ্ঞান যাচাই কালে।
ডাইরি-১ প্রতিটি পাঠ শেষে মূল্যায়ন নির্দেশক অনুয়াযী শিখনফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক মূল্যায়নের মান লিপিবদ্ধ করে রাখার পদ্ধতি হচ্ছে ডাইরি ১, শিক্ষক ডাইরি-১ এ শিক্ষার্থীর নাম,রোল নম্বর,অধ্যায়,পাঠ,শিখনফলের নম্বর উল্লেখ থাকবে।
💥রুব্রিক্স:
রুব্রিক্স হলো ১ টি শিখনফল অর্জনের জন্য মূল্যায়ন নির্দেশকে পদত্ত নির্দেশক সমূহের মান প্রদানের জন্য নমুনা দিকনির্দেশনা বা গাইডলাইন।
মূল্যায়ন নির্দেশক অনুযায়ী প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে ২ পাবে,যা শতকরা ৭৬-১০০%, আংশিক পারলে ১ পাবে যা শতকরা হারে ৫০-৭৫% না পারলে ০ পাবে। যা ০-৪৯% তবে কোন শিক্ষার্থীকে ০ তে রাখা যাবে না। তাকে ফলাবর্তন ও পুন:মূল্যায়ন করে ১ বা ২ এ আনতে হবে।
ডাইরি-২ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নির্দেশক থেকে প্রাপ্ত মান প্রতি অধ্যায় শেষে অধ্যায় ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা অর্জনের বিবরণী হচ্ছে শিক্ষক ডাইরি ২
💥প্রগ্রেসিভ রিপোর্ট:
প্রান্তিক শেষে বিষয়ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা অর্জনের প্রাপ্ত মান আবার ৪ টি স্কেল বা মাত্রার উপর ভিত্তি করে বিষয়ভিত্তিক সার্বিক অগ্রগতির অবস্থান নির্ণয়ের ম্যাট্রিক্স হচ্ছে প্রগ্রেসিভ রিপোর্ট। প্রগ্রেসিভ রিপোর্টে ০-৩৯% পেলে সহায়তা দরকার, ৪০-৫৯% পেলে সন্তোষজনক,৬০-৭৯% পেলে ভালো, ৮০-১০০% পেলে উত্তম হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এখানে কোনভাবেই নাম্বার দেওয়া বা লিখা যাবে না। প্রগ্রেসিভ রিপোর্টে শ্রেণি শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর থাকবে।
💥অধ্যায়ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতার মানকে শতকরা ফলাফল রুপান্তরের প্রক্রিয়া:
১। ১ টি অধ্যায়ে মোট পাঠ সংখ্যা/মূল্যায়ন নির্দেশক মান।
২। মোট পাঠ/ মূল্যায়ন নির্দেশকের সংখ্যা * (গুণ) সর্বোচ্চ মান ২ = মোট মান
৩। শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত মোট মান= ১ টি অধ্যায়ে মোট পাঠ সংখ্যা/ মূল্যায়ন নির্দেশকের জন্য ডাইরি ১ এ পদত্ত মান।
৪। ফলাফল = শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত মোট মান÷মোট পাঠ/ মূল্যায়ন নির্দেশকের মান= ১০০
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সকল বিষয়ের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রান্তিকভিত্তিক শিখন অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রস্তুত করে শিক্ষার্থী/অভিভাবককে প্রদান করতে হবে।


No comments

Your opinion here...

Theme images by fpm. Powered by Blogger.