বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি, সেশন ফি এবং বোর্ড পরীক্ষার ফি-সহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণকল্পে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা। (৩১/০৭/২০২৩)
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি, সেশন ফি এবং বোর্ড পরীক্ষার ফি-সহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণকল্পে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা। (৩১/০৭/২০২৩)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ
বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখা
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
www.shed.gov.bd
স্মারক নম্বর: 31-7.00.0000.072.44.05.22. 161
তারিখ ১৬ শ্রাবণ ১৪৩0
৩১ জুলাই ২০২৩
প্রজ্ঞাপন
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি, সেশন ফি এবং বোর্ড পরীক্ষার ফি-সহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণকল্পে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিম্নরূপ নীতিমালা প্রণয়ন করিল :
২। নীতিমালার শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন :
(ক) এই নীতিমালা ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিসংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২৩' নামে অভিহিত হইবে।
(খ) ইহা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে ।
(গ) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
৩। সংজ্ঞার্থ : বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই নীতিমালায় -
(ক) ‘আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা' অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান ;
(খ) ‘ইমপ্রেস্ট ফান্ড (Imprest Fund)' অর্থ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য স্বল্প পরিমাণ নগদ অর্থ;
(গ) ‘কর্মচারী' অর্থ শিক্ষক ব্যতীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাপ্তরিক/ল্যাব/শপ বা অন্যান্য কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত পূর্ণকালীন কর্মরত ব্যক্তি;
(ঘ)“ক্যাশবহি' অর্থ যে বহিতে টি.আর. ফর্ম-৩ অনুসারে দৈনন্দিন আয় ও ব্যয়ের হিসাব লেখা হইয়া থাকে;
(ঙ) ‘পরিচালনা কমিটি' অর্থ গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটি/বিশেষ কমিটি/অ্যাডহক কমিটিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপরিচালনার নিমিত্ত অন্য যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, তাহা পরিচালনা কমিটি হিসাবে বিবেচিত হইবে;
(চ) ‘ভাউচার' অর্থ টাকা প্রদানের/লেনদেনের লিখিত রসিদ যাহা সাধারণত দাবিকৃত বিল পরিশোধ হইবার পর ভাউচার হিসাবে গণ্য হইবে;
(ছ) ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান' অর্থ সরকারের বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) যাহা জাতীয়করণকৃত নহে;
(জ) ‘বেসরকারি আয়’ অর্থ এই নীতিমালায় ৩(ট)-এ বর্ণিত আয় ব্যতীত অন্যান্য আয়সমূহ;
(ঝ) ‘রশিদ” অর্থ টাকা গ্রহণের প্রমাণস্বরূপ ট্রেজারি ফর্ম নং-৫ অনুসরণক্রমে টাকা গ্রহণকারী কর্তৃক টাকা প্রদানকারীকে দেয় লিখিত দলিল;
(ঞ) ‘শিক্ষক' অর্থ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা/প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন শিক্ষাদানের জন্যনিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি ও প্রদর্শক;
(ট) 'শিক্ষার্থী' অর্থ বেসরকারি শিক্ষা/প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী;
(ঠ) ‘সাধারণ ব্যাংক হিসাব' অর্থ যে ব্যাংক হিসাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয়-ব্যয়েরহিসাব পরিচালিত হয়; এবং
(ড) ‘সরকারি অনুদান ও বেতন-ভাতা' বলিতে প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা ও ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ প্রদানের জন্য সরকার কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত (allocated) এবং সরকারি কোষাগার হইতে উত্তোলিত অর্থ।
৪। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের মূলনীতি :
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত সরকারি আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করিতে হইবে। পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের যৌথস্বাক্ষরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালিত হইবে। তহবিলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রচলিত বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠানপ্রধান কর্তৃক সংরক্ষণ করিতে হইবে। পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম/দুর্নীতি হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকিবে এবং তাহার বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধিবিধান- অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
৫। আয় ব্যবস্থাপনা :
(ক) শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রদত্ত সকল প্রকার ফি, বেতন সম্পদ খাত হইতে নিজস্ব সম্পদ খাতে আয়, দান, অনুদান ইত্যাদি নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব/মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রহণ করিতে হইবে। নগদ অর্থ আদায় করা যাইবে না। তবে বিশেষক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ গ্রহণ করিতে পারিবে এবং সেইক্ষেত্রে আদায়কৃত অর্থ পরবর্তী ২ (দুই) কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাংক হিসাবে জমা দিতে হইবে।
(খ) নিজস্ব সম্পদ (ভূমি, পুকুর, জমি, দোকান ইত্যাদি) হইতে আয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ করিতে হইবে।
(গ) সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়/সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বা সরকারের অনুমোদন ব্যতীত নূতন খাত সৃষ্টি করিয়া কোনো অর্থ আদায় করা যাইবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে আয়-ব্যয়ের নূতন খাত সংযোজন/বিয়োজন/পরিবর্তন করিতে পারিবে।
(ঘ) সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক নির্ধারিত খাতের অর্থ প্রতিষ্ঠান আদায় করিবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক জমা দিবে।
৬। ব্যয় ব্যবস্থাপনা :
(ক)‘পরিচালনা কমিটি' অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালায় বর্ণিত আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যাদিসংক্রান্তক্ষমতা এবং সময়ে সময়ে এইসংক্রান্ত বিষয়ে জারিকৃত নিদের্শনা অনুসরণ করিবে।
(খ) শিক্ষার্থীদের নিকট হইতে আদায়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট খাত ব্যতীত অন্য খাতে ব্যয় ও স্হানান্তর করা যাইবে না। তবে কোনো বিশেষ প্রয়োজনে পরিচালনা কমিটির অনুমোদনক্রমে অব্যয়িত অর্থ এবং জমাকৃত অর্থের ব্যাংকের লভ্যাংশ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণে অন্যখাতে স্থানান্তরসহ ব্যয় করা যাইবে। লভ্যাংশ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে পরিচালনা কমিটি ও ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে হইবে।
(গ) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক/সুপারিন্টেনডেন্ট ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্ত ইমপ্রেস্ট ফান্ড (Imprest Fund) - জন্য পরিচালনা কমিটির নিকট চাহিদাপত্র (Requisition) দিবেন। চাহিদাপত্রের সহিত পূর্ববর্তী ইমপ্লেস্ট ফান্ড বিল-ভাউচারসহ হিসাব বিবরণী দাখিল করিবেন। অর্থ ও ক্রয় উপকমিটির সুপারিশ ও পরিচালনা কমিটির অনুমোদনক্রমে প্রতিষ্ঠানপ্রধান প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় করিবেন এবং অডিট কমিটির নিকট উপস্থাপনের জন্য বিলভাউচার সংরক্ষণ করিবেন।
(ঘ) ইমপ্রেস্ট ফান্ড (Imprest Fund) ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির পূর্বঅনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে এবং ব্যয় নির্বাহের পর বিল-ভাউচার অর্থ ও ক্রয় উপকমিটির সুপারিশক্রমে পরিচালনা কমিটি অনুমোদন করিবে। অডিটের জন্য বিল ভাউচার সংরক্ষণ করিতে হইবে।
(ঙ) দৈনন্দিন অত্যাবশ্যকীয়/আনুষঙ্গিক ব্যয় মিটানোর জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানগণ সর্বোচ্চ যে পরিমাণ অর্থ নগদে প্রতিমাসে (cash) খরচ করিতে পারিবেন :
০১। নিম্নমাধ্যমিক/মাধ্যমিক স্তর=১০,০০০/-
০২। উচ্চমাধ্যমিক স্তর=১৫,০০০/-
০৩। স্নাতক স্তর=২০,০০০/-
০৪। স্নাতকোত্তর স্তর=২০,০০০/-
স্তরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানপ্রধানগণ উল্লিখিত পরিমাণ টাকা প্রতিমাসে দৈনন্দিন অত্যাবশ্যকীয়/আনুষঙ্গিক ব্যয় মিটানোর জন্য নগদে ব্যয় করিতে পারিবেন। উল্লিখিত পরিমাণ ব্যয়ের অতিরিক্ত ব্যয় ক্রস চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করিতে হইবে।
(চ) বিবিধ খাতে আদায়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট খাত (অনুচ্ছেদ ১০) ব্যতীত ব্যয় করা যাইবে না। পরিচালনা কমিটির অনুমোদনক্রমে প্রতিষ্ঠানপ্রধান অর্থ ও ক্রয় উপকমিটির মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করিবেন এবং উক্ত ব্যয়ে পরিচালনা কমিটির ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।
(ছ) ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত হারে ভ্যাট ও আয়কর কর্তন/আদায় করিয়া সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করিতে হইবে।
(জ) উন্নয়ন তহবিলের অর্থ বিদ্যমান আর্থিক বিধানাবলি অনুসরণপূর্বক কেবল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ব্যয় করা যাইবে।
(ঝ) অর্থবৎসরের শুরুতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালন কাজের জন্য একটি (বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা পরিচালনা কমিটিতে উপস্থাপিত হইবে। কমিটির সভায় অনুমোদনের পর ক্রয়পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ ও ক্রয় উপকমিটির মাধ্যমে ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করিতে হইবে।
(ঞ) ক্রয় কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে পরিচালনা ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আলোচিত হইবে।
৭। শিক্ষার্থীদের নিকট হইতে আদায়কৃত অর্থের হিসাব সংরক্ষণ :
(ক) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত নির্দেশনা মোতাবেক নির্ধারিত খাত ও হার অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিকট হইতে অর্থ আদায় করা যাইবে। অন্য কোনোভাবে বা নামে কোনো অর্থ শিক্ষার্থীদের নিকট হইতে আদায় করা যাইবে না। তবে সকল অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের রশিদ প্রদান করিতে হইবে।
(খ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আদায়কৃত অর্থ প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা রাখিতে হইবে।
(গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ক্যাশবহি মোতাবেক হিসাব সংরক্ষণ করিতে হইবে।
(ঘ) আয়-ব্যয় ও হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি নির্দেশিকা, ১৯৮৪' এবং সময়ে সময়ে এইসংক্রান্ত বিষয়ে জারিকৃত নির্দেশনা অনুসরণ করিতে হইবে।
৮। শিক্ষার্থীদের নিকট হইতে আদায়কৃত অর্থের ব্যবহার :
(ক) (খ) প্রতিটি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভাউচার থাকিতে হইবে। ভাউচারবিহীন ব্যয় গ্রহণযোগ্য হইবে না।
(খ) শিক্ষার্থীদের নিকট হইতে আদায়কৃত অর্থ ব্যক্তিগত কোনো প্রকার ঋণ বা অগ্রিম হিসাবে প্রদান করা যাইবে না। তবে শিক্ষক কর্মচারীদের মানবিক প্রয়োজনে চিকিৎসা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনাজনিত পরিচালনা কমিটির অনুমোদনক্রমে এই ধরনের ঋণ বা অগ্রিম প্রদান করা যাইবে, যাহা পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন হইতে মাসিক কিস্তিতে আদায় করিতে হইবে।
(গ) ক্রয়কৃত মালামাল যথাযথভাবে স্টকবহিতে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে এবং বণ্টনের সময় চাহিদাপত্রসহ যথাযথভাবে হিসাব সংরক্ষণ করিতে হইবে।
(ঘ)বিল পরিশোধের পূর্বে যথাযথভাবে মালামাল বুঝিয়া পাওয়া বা মেরামত অথবা অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হইয়াছে মর্মে সংশ্লিষ্ট উপকমিটি কর্তৃক প্রত্যয়ন ও পরিচালনা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।
(ঙ) এই নীতিমালার অধীনে কার্য সম্পাদনের জন্য প্রদত্ত অগ্রিম সংশ্লিষ্ট অর্থবৎসরের মধ্যে আবশ্যিকভাবে সমন্বয় করিতে হইবে।
৯। জনবল খাতে ব্যয় ইত্যাদি :
(ক)জনবলকাঠামোর অতিরিক্ত শিক্ষক/কর্মচারী নিরাপত্তা/নৈশপ্রহরী/অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী খাতে আদায়কৃত অর্থ ব্যয় করা যাইবে, তবে এম.পি.ও.ভুক্ত শিক্ষক/কর্মচারীর চাইতে বেতনভাতাদি কখনোই বেশি হইবে না;
(খ) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এম.পি.ও. নীতিমালা, ২০২১-এর ১১.১৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত এ এম.পি.ও.ভুক্ত জনবলের ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাইবে না;
(গ) দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিযুক্ত ব্যক্তির মজুরির ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাইবে;
(গ) মজুরি/খণ্ডকালীন/জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত শিক্ষক/কর্মচারীর বেতন প্রদান(প্রযোজ্যক্ষেত্রে) ব্যয় করা যাইবে না;
(ঘ) প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানাবিধ ব্যয়; এবং
(ঙ) কম্পিউটার/কম্পিউটার ল্যাব/ব্যাবহারিক ল্যাব/শপ পরিচালনার জন্য অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত জনবলের
আনুষঙ্গিক ব্যয়।
১০। বিবিধ খাতে আদায়কৃত অর্থ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাইবে :
(ক) বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্যাপন
(খ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য স্টেশনারি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়;
(গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিভিন্ন সভা;
(ঘ) আপ্যায়ন; এবং
(ঙ) (ক) হইতে (ঘ)-এর অনুরূপ বায়।
১১। শিখন অর্জন মূল্যায়ন (পরীক্ষা)-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন :
শিক্ষাবোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়নসমূহের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাইবে না এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যয় করিতে হইবে।
১২। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয়-ব্যয় নিম্নোক্ত উপকমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন হইবে :
(i) অর্থ ও ক্রয় উপকমিটি :
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কর্তৃক মনোনীত কমিটির একজন সদস্যর (সভাপতি ও প্রতিষ্ঠানপ্রধান ব্যতীত) নেতৃত্বে কমিটির বাহিরের দুইজন সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে ৩ (তিন) সদস্যবিশিষ্ট একটি অর্থ ও ক্রয় উপকমিটি গঠন করিতে হইবে।
কার্যপরিধি :
(১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার অর্থ ও ক্রয় কার্যসংক্রান্ত সুপারিশ করিবে।
(২) পরবর্তী বৎসরের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের উপর ভিত্তি করিয়া পঞ্জিকাবৎসর শুরুর পূর্বেই অর্থ ও ক্রয় উপকমিটি বাজেট প্রণয়ন করিয়া পরিচালনা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করিবে। এই নীতিমালার আওতায় আদায়যোগ্য সকল অর্থসহ অন্যান্য উৎস হইতে প্রাপ্য অর্থ স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিকবাজেটে অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে।
(৩) পরিচালনা কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠানের পর পরবর্তী সভা অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিষ্ঠানপ্রধান কর্তৃক উপস্থাপনপূর্বক অনুমোদন নিশ্চিত করিতে হইবে।
(৪) পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের যৌথস্বাক্ষরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালিতহইবে।
(৫) তহবিলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রচলিত বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠানপ্রধান কর্তৃক সংরক্ষণ করিতে হইবে।
(৬) উপকমিটির মাধ্যমে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম/দুর্নীতি হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়বদ্ধ থাকিবে এবং তাহার বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
ii) অভ্যন্তরীণ অডিট উপকমিটি :
প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কর্তৃক মনোনীত ৩ (তিন) জন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক (অর্থ ও ক্রয় কমিটির সদস্য ব্যতিরেকে) দ্বারা অভ্যন্তরীণ অডিট উপকমিটি গঠন করিতে হইবে।
কার্যপরিধি :
(১) অডিট কমিটি কর্তৃক প্রতি পঞ্জিকাবৎসরের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা সম্পন্ন করিয়া পরবর্তী ৩১ জানুয়ারির মধ্যেপরিচালনা ম্যানেজিং কমিটি/ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি/বিশেষ কমিটি/অ্যাডহক কমিটির নিকট প্রতিবেদন দাখিল করিতে হইবে।
(২) উপকমিটির মাধ্যমে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম/দুর্নীতি হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়বদ্ধ থাকিবে এবং তাহার বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধিবিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
(iii) উন্নয়ন উপকমিটি :
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কোনো উন্নয়ন কাজ উন্নয়ন উপকমিটি কর্তৃক সম্পন্ন করিতে হইবে। উক্ত কমিটি নিম্নরূপে গঠিত এবং পরিচালনা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হইতে হইবে :
(১) প্রতিষ্ঠানের একজন সিনিয়র শিক্ষক---------আহ্বায়ক
(২) পরিচালনা কমিটির ১ (এক) জন-----------সদস্য
(৩) প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক প্রতিনিধি (শিক্ষক প্রতিনিধি)----------সদস্যসচিব
কার্যপরিধি :
(১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ;
(২) সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে/অনুদানে নির্মিতব্য/নির্মীয়মাণ অবকাঠামো পরিবীক্ষণ করা;
(৩) অর্থ ও ক্রয় উপকমিটিকে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা;
(৪) নির্মিত অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও তত্ত্বাবধান করা; (৫) অর্থ ও ক্রয় উপকমিটির অনাপত্তিসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতকরণ; এবং
(৬) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা ও মাঠসহ সমস্ত অঙ্গন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ ও রোপিত বৃক্ষের যত্ন নেওয়া ।
(iv) বেতন ও ফি আদায় উপকমিটি :
পরিচালনা কমিটির মেয়াদে অ্যাডহক কমিটির ক্ষেত্রে অ্যাডহক সময়কালীন অ্যাডহক কমিটির মেয়াদে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ০৩ (তিন) জন সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে বেতন ও ফি আদায় উপকমিটি প্রতি পঞ্জিকাবৎসরের জন্য গঠন করিতে হইবে।
কার্যপরিধি :
(১) বেতন ও ফি আদায় উপকমিটির তত্ত্বাবধানে সকল প্রকার ফি ও বেতন আদায় করিতে হইবে;
(২) মাসিক প্রতিবেদন পরিচালনা কমিটি বরাবর দাখিল করিতে হইবে;
(৩) উপকমিটির মাধ্যমে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম/দুর্নীতি হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়বদ্ধ থাকিবে এবং তাহার বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধিবিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।
(v) শিখন অর্জন মূল্যায়ন উপকমিটি :
অভ্যন্তরীণ শিখন অর্জন মূল্যায়নের জন্য ০৩ (তিন) জন শিক্ষকের সমন্বয়ে মূল্যায়নভিত্তিক উপকমিটি গঠন করিতে হইবে।
কার্যপরিধি :
(১) শিখন অর্জন মূল্যায়ন উপকমিটির আহ্বায়ককে তাহার কাজের জন্য প্রাক্কলিত বাজেট প্রণয়নপূর্বক প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমোদন নিতে হইবে। মূল্যায়ন পরীক্ষা কার্য সম্পাদনের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট দাখিল করিতে হইবে।
(২) শিখন অর্জন মূল্যায়ন উপকমিটি কার্য পরিচালনাসংক্রান্ত ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব কৃচ্ছ্রসাধন করিবে। কমিটির কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে ব্যর্থ হইলে সংশ্লিষ্ট উপকমিটি দায়ী থাকিবে।
(৩) উপকমিটি শিখন অর্জন মূল্যায়নসংক্রান্ত যাবতীয় আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব নিরীক্ষার জন্য রেজিস্টারে (ভাউচারসহ) সংরক্ষণ করিতে হইবে।
(8) উপকমিটির মাধ্যমে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম/দুর্নীতি হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়বদ্ধ থাকিবে এবং তাহার বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধিবিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
১৩। নিরীক্ষা কার্যক্রম :
(ক) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল আয়-ব্যয়, শিক্ষা বিভাগ, নিরীক্ষা বিভাগ, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)-এর পরিদর্শন ও নিরীক্ষার আওতাভুক্ত থাকিবে। উল্লিখিত যে-কোনো কর্তৃপক্ষের উত্থাপিত অডিট আপত্তি এই নীতিমালা এবং ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি নিৰ্দেশিকা, ১৯৮৪'-এর আলোকে নিষ্পত্তি করিতে হইবে'।
(খ) অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতি পঞ্জিকাবর্ষে ০২ (দুই) বার ক্যাশবহি ও ব্যাংক বিবরণী সংগ্রহপূর্বক সমন্বয় বিবরণী (Bank Reconciliation Statement) প্রস্তুত করিতে হইবে।
১৪। এইখানে বর্ণিত কোনো বিধানের সহিত অন্য কোনো নীতিমালায় বর্ণিত বিধান যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহা হইলে এই নীতিমালায় বর্ণিত বিধানই প্রাধান্য পাইবে। এই নীতিমালায় অস্পষ্টতা/প্রয়োগের অসুবিধা দূরীকরণে সরকার ব্যাখ্যা প্রদান করিবে।
১৫। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই নীতিমালা জারি করা হইল যাহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে,
স্বাক্ষরিত
সোলেমান খান
সচিব
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ
No comments
Your opinion here...