জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এর শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা
জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এর শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা
শিখন -ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মূল যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং প্রাথমিক শিক্ষার সমাপন পর্যায়ে শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ্য, মানসিক পরিপক্কতা, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদা, বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি, শিক্ষকের প্রস্তুতি, ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রেখে প্রাথমিক স্তরের শিখন ক্ষেত্র ভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। এই স্তরে শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থী কতটুকু আচরণিক পরিবর্তন, জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটবে বলে আশা করা যায় সুনির্দিষ্ট করা যায়। শিখন ক্ষেত্র: ভাষা ও যোগাযোগ: শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা: ১) একাধিক ভাষায় কথোপকথন, বক্তৃতা, বর্ণনা শুনে এবং পঠন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে লিখিত বা অঙ্কিত বিষয়বস্তু পড়ে বা বুঝে জ্ঞান অর্জন অব্যাহত রাখতে সমর্থ হওয়া। ২) পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভাষা ব্যবহার করে, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে মনোভাব ও অনুভূতি সহজ, সঠিক ও কার্যকর ভাবে নানান মাধ্যমে প্রকাশ ও আদান-প্রদান করতে পারা। ৩) গল্প, কবিতা, ছড়া সহ সৃজনশীল রচনা শুনে ও পড়ে আনন্দ লাভ করতে পারা এবং আবৃত্তি ও ভূমিকাভিনয় এর মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে পারা। শিখন ক্ষেত্র: গনিত যুক্তি:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
১) গাণিতিক সংখ্যা ও প্রক্রিয়ার (যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগ) ধারণা লাভ করে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করা। ২) জ্যামিতিক আকৃতি ও বিভিন্ন ধরনের পরিমাপের ধারণা লাভ করে প্রাত্যহিক জীবনে তা ব্যবহার করতে পারা। ৩) পর্যবেক্ষণ ও পারস্পরিক যোগাযোগের (মিথস্ক্রিয়া) মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার দক্ষতা অর্জন করা। দৈনন্দিন জীবনে সৃজনশীলতার সাথে ইতিবাচক ও যৌক্তিকভাবে গাণিতিক দক্ষতা প্রয়োগ করে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে পারা।
শিখন ক্ষেত্র: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
১) চারপাশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক ঘটনা ও ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে কৌতুহলী হয়ে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে যৌক্তিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে পারা।
২) বাড়ি, বিদ্যালয় ও নিকট পরিবেশের প্রপঞ্চ, ঘটনা ও ঘটনা প্রবাহ চিহ্নিত করা এবং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ জেনে ও অনুশীলন করে সৃজনশীল উপায়ে কল্যাণকর সমাধানে সচেষ্ট হওয়া। শিখন ক্ষেত্র: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
তথ্য ও যোগাযোগ ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অব্যাহত বিকাশ সম্পর্কে অবহিত থাকা নিত্যনতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা লাভ করা এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে এর নিরাপদ ইতিবাচক কার্যকর ও যথাযথ ব্যবহারে সক্ষম হওয়া।
শিখনক্ষেত্র: পরিবেশ ও জলবায়ু: শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
১) প্রকৃতি, পরিবেশ জলবায়ু ইত্যাদি গুরুত্ব ও আন্ত: সম্পর্ক বুঝিয়ে মানব সমাজ ও বাস্তুসংস্থান টিকিয়ে রাখায় এগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি করতে পারা এবং প্রকৃতি ও পরিবেশকে ভালবাসতে পারা।
২) প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু দূষণের কারণ ও প্রতিকার দুর্যোগ, পরিবেশে প্রতিকূলতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জেনে পরিবেশ সংরক্ষণে সচেষ্ট হওয়া এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে পারা।
৩) টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ, পরিমিত ও পুন: ব্যবহার করতে পারা।
শিখন ক্ষেত্র: সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
১) জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, সক্ষমতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সম্প্রীতি বোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং ব্যক্তিগত জীবনে তা চর্চা করা।
২) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জেনে এর চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং নিজের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
৩) বাংলাদেশের ভৌগোলিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং এর আন্তঃসম্পর্ক বুঝতে পারা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্ব সংস্কৃতি প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
শিখন ক্ষেত্র: জীবন ও জীবিকা:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
১) ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা সহ (সঠিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন, যোগাযোগ দক্ষতা অভিযোজন ক্ষমতা, নেতৃত্ব, অভিযোজন ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, শুদ্ধাচার, আত্মব্যবস্থাপনা) নিজেকে প্রস্তুত করা। ২) সকল বৃত্তি ও পেশার গুরুত্ব সম্পর্কে জানা, সমাজ গঠনে সকলের অবদান উপলব্ধি করতে পারা ও কায়িক শ্রমের প্রতি আগ্রহী হওয়া। ৩) আর্থিক সাক্ষরতা (দৈনন্দিন হিসাব-নিকাশ, লেনদেন, সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার, সঞ্চয়ী মনোভাব) অর্জন এবং প্রাত্যহিক জীবনে তার প্রয়োগ করতে পারা। শিখন ক্ষেত্র: মূল্যবোধ ও নৈতিকতা:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
১) নিজ নিজ ধর্মীয় আদর্শ ও অনুশাসন অনুশীলনীর মাধ্যমে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলী অর্জন করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে সক্ষম হওয়া।
২) নৈতিক গুণাবলী (সততা, স্বচ্ছতা, পরমত সহিষ্ণুতা, সদাচার, সহমর্মিতা, ন্যায় পরায়ণতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ) অর্জন এবং ভালো মন্দ ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য করতে সক্ষম হয়ে ব্যক্তি, পরিবার, বিদ্যালয়ে ও সমাজে তা চর্চা করা।
৩) মানুষ-প্রকৃতি-জীবজগৎ ও পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রদর্শন করা।
শিখন ক্ষেত্র: শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা:
১) শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন সম্পর্কে জেনে স্বাস্থ্যবিধি (ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা শরীরচর্চা ও খেলাধুলা) খাদ্য ও পুষ্টি, সাধারণ রোগ প্রতিকার, পরিছন্নতা ইত্যাদি মেনে স্বাস্থ্যসম্মত, সুরক্ষিত ও নিরাপদ জীবন যাপনে সক্ষম ও অভ্যস্ত হওয়া
২) মানসিক বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন সম্পর্কে জেনে এর পরিচর্যার (আত্ম সচেতনতা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, আবেগ ব্যবস্থাপনা, সুস্থ বিনোদন চর্চা ইত্যাদি) মাধ্যমে সুস্থ, নিরাপদ, সুরক্ষিত ও আনন্দময় ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন যাপনে সক্ষম ও অভ্যস্ত হওয়া।
শিখন ক্ষেত্র: শিল্প ও সংস্কৃতি:
শিখন ক্ষেত্রভিত্তিক প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতা: ১) ছবি আঁকা, ছড়া, কবিতা, গল্প, গান, অভিনয় ইত্যাদির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় ঐতিহ্য কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালন করতে সক্ষম হওয়া। ২) চারু ও কারুকলা সংগীত নৃত্য খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নান্দনিকতাবোধ অর্জন করে সৃজনশীল মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশে সক্ষম হওয়া। ৩) বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি (রূপকথা, গান, গল্প, লোকাচার, খেলা চলচ্চিত্র, উৎসব খাবার ইত্যাদি) সম্পর্কে জানা এবং তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করে লালন ও চর্চা করা।
No comments
Your opinion here...