সহকারী শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছরের উচ্চতর স্কেল–জটিলতা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
সহকারী শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছরের উচ্চতর স্কেল–জটিলতা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি—চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদান—নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পুনরায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-২ শাখা থেকে ১৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে যুগ্মসচিব রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষক সংগঠনগুলোর আন্দোলন ও পরবর্তী বৈঠকগুলোতে উচ্চতর স্কেল সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত সমাধানের সুস্পষ্ট প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আরো গুরুত্ব পায়।
সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি
চিঠির সূত্র অনুযায়ী শিক্ষক সংগঠনগুলো তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করে—
১. সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ।
২. চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল (টাইমস্কেল/সিলেকশন গ্রেড) প্রদানের জটিলতা নিরসন।
৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
বৈঠকগুলিতে অর্থ সচিব জানান যে, ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পে-কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নেওয়া হবে।
১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল বিষয়ে জটিলতা
সহকারী শিক্ষকদের অন্যতম বড় সমস্যা—উচ্চতর গ্রেড প্রদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও অস্পষ্টতা।
চিঠিতে বলা হয়েছে—
জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১০ বছর পূর্তিতে ১১তম বছরে, এবং পরবর্তী ৬ বছর পর দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার বিধান রয়েছে।
-
কিন্তু ময়মনসিংহসহ কয়েকটি জেলায় জারি করা উচ্চতর স্কেলের আদেশ স্থানীয় হিসাবরক্ষণ অফিস বাস্তবায়ন করেনি।
-
হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয় ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার মতামত অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষকগণের বেতনস্কেল ২০২০ সালের উন্নীতকরণের তারিখ থেকে ১০ বছর পূর্তির আগে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্য হবে না।
এ অবস্থায় ২০০৮–২০১৪ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত লক্ষাধিক শিক্ষক টাইমস্কেল না পেয়ে অবসরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা সিনিয়রদের সঙ্গে সুস্পষ্ট বৈষম্য তৈরি করছে।
মন্ত্রণালয়ের যুক্তি: উন্নীত স্কেল ও উচ্চতর স্কেল এক নয়
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—
সহকারী শিক্ষকদের স্কেল ইতোমধ্যে ২০০৬, ২০১৪ ও ২০২০—মোট তিনবার উন্নীত করা হয়েছে।
-
উন্নীত স্কেলকে উচ্চতর স্কেল হিসেবে গণ্য করা হলে বহু শিক্ষক কখনোই টাইমস্কেল পাবেন না।
-
২০০৮ সালের পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ২০০৬ ও ২০১৪ সালের উন্নীত স্কেল পাওয়ার পরও যথারীতি ১ম, ২য় ও ৩য় টাইমস্কেল পেয়েছেন।
-
তাই ২০২০ সালের উন্নীত স্কেলের পর উচ্চতর গ্রেড পাওয়া যুক্তিসংগত।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য—সহকারী শিক্ষকদের পদবী বা শ্রেণিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাই নিয়োগের তারিখ থেকে সময় গণনা করে ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর স্কেল দেওয়া উচিত।
সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে—
অর্থ বিভাগ ২০১৬ সালের বেতনস্কেল স্পষ্টিকরণ পরিপত্রের “গ” অনুচ্ছেদটি পুনর্বিবেচনা ও সংশোধন করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এর ফলে—
সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীত হওয়ার পূর্বের সময়ও গণনায় আসবে
-
তারা চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে বিধি মোতাবেক উচ্চতর স্কেল পাবেন
সদয় বিবেচনার আহ্বান
চিঠির শেষাংশে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পুনরায় অনুরোধ করা হয়েছে—
সহকারী শিক্ষকদের চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে বড় মানবসম্পদ—সহকারী শিক্ষকরা—এই সিদ্ধান্তের জন্য বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। তাদের বেতন–গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতা দূর হলে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ন্যায়সংগত কর্মপরিবেশ তৈরি হবে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিদ্যালয়-২ শাখা
www.mopme.gov.bd
তারিখঃ ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ১৯ নভেম্বর ২০২৫
স্মারক নং: ৩৮.০০,০০০০,০০৮,১২.০০৭.১৬-৪৮৭
বিষয়: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদান।
সূত্র:(১) প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ এর জনাব আবুল কাশেম গং এর ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের আবেদন (সংযুক্ত)।
(২) বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এর জনাব ওয়েছ আহমদ চৌধুরী গং এর ১২.১১.২০২৫ তারিখের আবেদন (সংযুক্ত)।
(৩) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পত্র নং- ৩৮.০১.০০০০,১৪৫.১২.০০১.২৪-৭৫, তারিখ: ২৭.০৫.২০২৫।
উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রস্থ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ ০৩ (তিন) দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে "প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ কর্তৃক গত ০৮/১১/২০২৫ তারিখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সে প্রেক্ষিতে গত ০৯/১১/২০২৫ তারিখ সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পুনরায় গত ১০/১১/২০২৫ তারিখ সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় এর সভাপতিত্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ দুটি মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ০২টি সভায় নিম্নোক্ত ০৩ (তিন) টি দাবি উপস্থাপন করা হয় এবং শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে ০৩ (তিন) দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। উক্ত দাবীসমূহ নিম্নরূপ:
১। সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা;
২। চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দ্রুত নিরসন; এবং
৩। সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান।
২। উল্লেখ্য, ১ম দাবী অর্থাৎ সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে বেতন উন্নীত করার বিষয়ে পে-কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে মর্মে অর্থ সচিব উল্লেখ করেন।
৩। সহকারী শিক্ষকগণের ২ নং দাবি অর্থাৎ চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্য আলোচনা হয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হতে বর্ণিত বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। বর্ণিত দাবীর বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে ২৭ মে ২০২৫ তারিখে ৭৫ সংখ্যক স্মারকে (কপি সংযুক্ত-১) প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এ মন্ত্রণালয় হতে ০২ জুলাই ২০২৫ তারিখে ৩০৭ সংখ্যক স্মারকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের পূর্বের সময় গণনা করে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদানের বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয় (কপি সংযুক্ত-২)। সে প্রেক্ষিতে ২০ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ হতে ১৫৭ সংখ্যক স্মারকে মতামত প্রদান করা হয় যা নিম্নরূপ (কপি সংযুক্ত-৩):
"পদের মূল বেতনস্কেল (Substantive Grade) উন্নীত করা হলে উক্ত উন্নীতকরণের তারিখ হতে 'জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ-৭ অনুযায়ী' পদোন্নতি ব্যতিরেকে একই পদে পরবর্তী ১০ বছরে উচ্চতর গ্রেড বিবেচিত হবে'
৪। উপরে বর্ণিত প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ উচ্চতর গ্রেড মঞ্জুরির আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যাদি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
ক. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৩৮.০০.০৩৫.০০,০০,০১০.২০১৩-১১১ তারিখ: ০৯.০৩.২০১৪ অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ১৫নং থেকে ১৪নং গ্রেডে (টা: ৫২০০-১১২৩৫/-) এবং প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল ১৬নং গ্রেড থেকে ১৫নং গ্রেডে (টা:৪৯০০-১০৪৫০/) উন্নীত করা হয় (কপি সংযুক্তি-৪)। পরবর্তীতে ০৯/০২/২০২০ তারিখে উভয়স্কেল ১৩নং গ্রেডে উন্নীত করা হয় (কপি সংযুক্তি-৫)।
খ. জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ৭(১) ও (২) অনুযায়ী কোন স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ব্যতিরেকে একই পদে ১০ (দশ) বছর পূর্তিতে চাকুরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বছরে পরবর্তীতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন উল্লেখ আছে। এই ধারা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ফুলপুর উপজেলার ৬২ জন সহকারী শিক্ষককে উচ্চতর গ্রেডের আদেশ প্রদান করা হয় কিন্তু স্থানীয় হিসাবরক্ষণ অফিস তা বাস্তবায়ন করেননি। হিসাব মহানিয়ন্ত্রক এর কার্যালয়ের স্মারক নং-০৭.০৩.০০০০.০০৯.৫০, ৮১০.২১.১৫১, তারিখ: ১৪/১১/২০২২ এর (কপি সংযুক্তি-৬) বিবরণ উল্লেখ করেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ ও পৃষ্ঠাংকন ছাড়া উচ্চতর গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে আপত্তি প্রদান করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ০৯ জন সহকারী শিক্ষকের
চাকুরিকাল ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন। শিক্ষকদের আবেদন অনুযায়ী তাদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত প্রদানের জন্য প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়। উক্ত পত্রের আলোকে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ০৩/০২/২০২৫ তারিখের সিএফও/প্রাগম/নি:-২/বিবিধ/৪১০/৫৭১নং পত্রে (কপি সংযুক্তি-৭) উল্লেখ করেন যে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত ব্যতিত সহকারী শিক্ষকগণের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের তারিখ হতে ১০ বছর পূর্তিতে ০৯/০২/২০৩০ তারিখে পূর্বে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার সুযোগ নাই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ময়মনসিংহ কর্তৃক জারীকৃত উচ্চতর গ্রেডের আদেশটি বিধি সম্মত না হওয়ায় আদেশটি বাতিল যোগ্য।
গ. অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন-১ অধিশাখার ১৫ অক্টোবর, ২০২০ খ্রি. তারিখের স্মারক নং ০৭,০০,০০০০.১৬১.৩৮.০০৫.১২-১৪১ অনুযায়ী (কপি সংযুক্তি-৮) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ০৯/০৩/২০১৪ থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে বিধায় ৩য় শ্রেণির চাকুরিকালের সাথে ২য় শ্রেণির চাকুরিকাল গণনা করে জাতীয় বেতনস্কেল, ২০০৯ এর ৭(১) নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী টাইমস্কেল প্রাপ্য হবেন না এবং টাইমস্কেল প্রদানের ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতনস্কেল, ২০০৯ এর ৭(১) নং অনুচ্ছেদ এবং ২য় শ্রেণির জন্য কর্মচারীদের জন্য ৭(২)নং অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য উল্লেখ আছে। উক্ত পত্রমতে সহকারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে জাতীয় বেতনস্কেল, ২০০৯ এর ৭(১) নং অনুচ্ছেদ প্রয়োজ্য।
ঘ. জাতীয় বেতনস্কেল, ২০০৯ এর ৭(১) নিম্নরূপ উল্লেখ রয়েছে:
"জাতীয় বেতনস্কেল, ২০০৯ এর টাকা ৪১০০-৭৭৪০ (২০ নং গ্রেড) হইতে টাকা ৮০০০-১৬৫৪০/- (১০ নং গ্রেড) বেতনস্কেল বিশিষ্ট পদের আওতাভুক্ত কর্মচারীগণ একই অথবা সমপর্যায়ের পরস্পর বদলিযোগ্য পদে ৮, ১২ ও ১৫ বৎসর চাকরি পূর্তি এবং চাকরির সন্তোষজনক রেকর্ডের ভিত্তিতে ও এতদসংক্রান্ত প্রচলিত শর্তাদি পূরণ সাপেক্ষে যথাক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় পরবর্তী উচ্চতর বেতনস্কেলে, উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) হিসাবে প্রাপ্য হইবেন"
তবে শর্ত থাকে যে একই কর্মচারী পদোন্নতি ব্যতীত সমগ্র চাকরি জীবনে ৩টির অধিক টাইমস্কেল প্রাপ্য হইবেন না। আরও শর্ত থাকে যে সিলেকশন গ্রেড স্কেল এবং উচ্চতর স্কেল (টাইম-স্কেল) যুগপৎভাবে প্রদান সংক্রান্ত অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০-১১-১৯৯৭ তারিখের অম/অবি (বাস্ত-৩)/ টাইমস্কেল-৩/৯৬ (অংশ)/৭২ (২০০) নং স্মারকে বর্ণিত ব্যাখ্যা বলবৎ থাকিবে।"
ঙ. ২০১৫ এর জাতীয় বেতনস্কেল, বিষয়ে অর্থ বিভাগের স্পষ্টিকরণ পরিপত্র নং ১৭.০০.০০০০.১৬১,০০,০০২.১৬ (অংশ-১) ২৩২, তারিখ:২১.০৯.২০১৬ এর গ(৩) এ উল্লেখ আছে যে "একই পদে কর্মরত কর্মচারী কোন প্রকার উচ্চতর স্কেল (টাইমস্কেল/সিলেকশন গ্রেড যে নামেই অভিহিত হউক) না পাইয়া থাকিলে সন্তোষজনক চাকুরির শর্তে তিনি ১০ (দশ) বছর চাকুরি পূর্তিতে ১১ তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড এবং পরবর্তী ৬ বছরে পদোন্নতি না পাইলে ৭ম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হইবেন।" (কপি সংযুক্তি-৯)।
চ. অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন-১ অধিশাখার ০৯ অক্টোবর, ২০২১ খ্রি. তারিখের স্মারক নং ০৭,০০,০০০০,১৬৫.০৭.০০২.১২-৬০ অনুযায়ী একই পদে কোন কর্মচারীর উন্নীতকরণ প্রক্রিয়ায় কোন উচ্চতর বেতনগ্রেড পেয়ে থাকলে উন্নীতকরণের তারিখ হতে ১০ বছর পূর্তিতে জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ এ ৭(১) অনুচ্ছেদ মোতাবেক পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড পাবেন উল্লেখ আছে (কপি সংযুক্তি-১০)।
৫। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক উল্লিখিত তথ্যাবলি পর্যালোচনান্তে জানান যে, ২০১৪ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের ১৪ তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের ১৫তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে উভয়স্কেল ১৩ তম গ্রেডে উন্নীত করা হয় অর্থাৎ ১৩ তম গ্রেডটি সহকারী শিক্ষকদের একটি উন্নীত গ্রেড। জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ এর বিষয়ে অর্থ বিভাগের স্পষ্টিকরণ পরিপত্র (নং ১৭,০০,০০০০,১৬১,০০,০০২.১৬ (অংশ-১) ২৩২, তারিখ: ২১.০৯.২০১৬)-এর "গ" অনুচ্ছেদটি পুন: বিবেচনাপূর্বক সংশোধন করা হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীত করণের পূর্বের সময় গণনা করে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদান করা সম্ভব হবে।
৬। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের পূর্বের সময় গণনা করে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদানের বিষয়ে নিম্নরূপ যৌক্তিকতা তুলে ধরা হলো:
(ক) সহকারী শিক্ষকদের এ যাবৎকালে ২৯/০৮/২০০৬, ০৯/০৩/২০১৪ ও ০৯/০২/২০২০ খ্রি. ০৩ (তিন) বার বেতন স্কেল উন্নীত করা হয়েছে, উন্নীত স্কেলের জন্য ইতো:পূর্বে কখনোই টাইমস্কেল প্রদান বাধ্যাপ্রাপ্ত হয়নি। এমনকি ০৯/০৩/২০১৪ সালে উন্নীত স্কেল প্রদানের পর ময়মনসিংহ এর স্মারক নং-জেপ্রাশিঅ/ময়মন/টাইমস্কেল/৪১২৬/১, তারিখ-১৩.১২.২০১৫খ্রি. ১ম ও ২য় টাইম স্কেল প্রদান করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ০৯/০২/২০২০ খ্রিষ্টাব্দে উন্নীত স্কেলের পরের আদেশ বাস্তবায়ন হওয়া যুক্তিযুক্ত।
(খ) উন্নীত স্কেল সকল সহকারী শিক্ষকগণ পেয়েছেন, যারা ৩টি টাইমস্কেল পেয়েছেন তারাও ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের মাধ্যমে ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন এবং ২০২০ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত তারাও ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে উন্নীত স্কেল ও উচ্চতর গ্রেড দুটির বিষয় আলাদা।
(গ) আবার ০৯.০৩.২০১৪ ও ০৯.০২.২০২০ সালের উন্নীত স্কেলকে উচ্চতর হিসেবে ধরা হলে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকগণ কোন উচ্চতর গ্রেড না পেয়ে ১৩তম গ্রেডে অবসরে যাবেন ফলে একই পদের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের সাথে চরম বৈষম্য তৈরি হবে। ২০০৮ সালের পূর্ববর্তী নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ ২০০৬ ও ২০১৪ সালের উন্নীত স্কেলে বেতন নির্ধারণের পরও যথারীতি ১ম, ২য় ও ৩য় টাইমস্কেল পেয়েছেন। সে মোতাবেক ০৯.০২.২০২০ সালের উন্নীত স্কেলের পরে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তি যুক্তিযুক্ত।
(ঘ) সহকারী শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেডে উন্নীত স্কেল দেওয়ার কারণে তাদের পদবী ও শ্রেণি পরিবর্তন হয়নি। তাছাড়া সহকারী শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড না দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন আদেশও নেই। সে কারণে ১ম যোগদানের তারিখ থেকে সন্তোষজনক চাকুরীর শর্তে ১০ বছর পূর্তিতে ১১তম বছরে ১ম উচ্চতর গ্রেড এবং ১৬ বছর পূর্তিতে ১৭ তম বছরে ২য় উচ্চতর গ্রেড প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যায়।
৭। এমতাবস্থায়, সূত্রে উল্লিখিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনদ্বয়ের আবেদনসমূহ সদয় বিবেচনাক্রমে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের পূর্বের সময় গণনা করে ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদানের সদয় ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পুনরায় নির্দেশক্রমে বিনীত অনুরোধ করা হলো।
সংযুক্তি: বর্ণনা অনুযায়ী।
স্বাক্ষরিত
রেবেকা সুলতানা
যুগ্মসচিব
প্রাপক
সচিব
অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।








No comments
Your opinion here...