সকল সরকারি চাকরিতে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণে নতুন নির্দেশনা
সকল সরকারি চাকরিতে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণে নতুন নির্দেশনা
সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সোমবার (২৫ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর অধীন সরকারি দপ্তর/পরিদপ্তর/অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সকল গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলো।
নতুন নির্দেশনার মূল দিকগুলো:
✅ অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধা তালিকা এবং বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুযায়ী শূন্য পদে প্রার্থী সুপারিশের পাশাপাশি প্রতিটি পদে ১:২ অনুপাতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাক্রম অনুসারে তালিকা করা হবে।
✅ মেয়াদ
অপেক্ষমাণ তালিকার মেয়াদ হবে প্রথম নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের তারিখ থেকে ১ বছর অথবা পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পর্যন্ত—যেটি আগে ঘটে।
✅ শূন্য পদ পূরণে ব্যবহার
নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ যোগদান না করলে বা চাকরি ছাড়লে সংশ্লিষ্ট ডিপিসি (Departmental Promotion Committee) সভায় অপেক্ষমাণ তালিকা উপস্থাপন করে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে।
✅ অবহিতকরণ
ডিপিসি অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রার্থী সুপারিশ করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নাম রোল নম্বরসহ দপ্তরের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন কল, এসএমএস, ই-মেইল এবং ডাকযোগে নিয়োগপত্র পাঠাতে হবে।
✅ জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ
অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে মূল নিয়োগপ্রাপ্তদের পরে। একই দিনে একাধিক প্রার্থী যোগদান করলে তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে পরীক্ষার মেধাক্রম অনুযায়ী।
✅ বিশেষ শর্ত
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক প্রকাশিত বিসিএস বিজ্ঞপ্তির অধীনে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে না। এছাড়া কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বাইরে শূন্য পদ পূরণে অপেক্ষমাণ তালিকা ব্যবহার করা যাবে না।
কেন এ নির্দেশনা?
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, কোটার পরিবর্তনের কারণে পূর্বের নির্দেশনা সংশোধন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে নতুন কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর অনেক নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। তাই এ সংক্রান্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নতুন তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হলো।
পরবর্তী পদক্ষেপ
সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ ও কর্পোরেশনের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য অবহিত করা হয়েছে।
👉 অর্থাৎ এখন থেকে সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে যেকোনো পদ শূন্য হলে প্রার্থীরা আর নতুন বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা না করে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেই নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
বিধি-১ শাখা
www.mopa.gov.bd
নং-০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.০২০.২৪-২১৭
তারিখ: ১০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিষয়: মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন সরকারি দপ্তর/পরিদপ্তর/অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে সকল গ্রেডের পদে সরাসরি জনবল নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণ।
সরকার, মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন সরকারি দপ্তর/পরিদপ্তর/অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে যেহেতু কোটা পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে, সেহেতু অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণ সংক্রান্ত ১৭ এপ্রিল ২০২৩ খ্রি. তারিখের ০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.০১৬.২২-৯৬ নং পরিপত্র সংশোধনপূর্বক সকল গ্রেডের পদে সরাসরি জনবল নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণে নিম্নরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে:
(ক) নিয়োগ কমিটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধা তালিকা এবং বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে শূন্য পদে প্রার্থী সুপারিশের পাশাপাশি সুপারিশকৃত প্রতিটি পদের বিপরীতে ১:২ অনুপাতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য হতে অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরিপূর্বক কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরে সিলগালাকৃত খামে গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করবে। অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নের সময় ডিপিসি শূন্য পদে নিয়োগে যে ধরণের কোটায় সুপারিশ করবে, সেই কোটার যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য হতে প্রতিটি সুপারিশকৃত প্রার্থীর বিপরীতে ১:২ অনুপাতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করবে। তবে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করার সময়ে কোনো কোটার অধীন সংশ্লিষ্ট কোটার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা কোটা হতে মেধাক্রমের ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
(খ) অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণের মেয়াদ হবে বিবেচ্য বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে প্রথম নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের তারিখ হতে ০১ (এক) বৎসর বা শূন্য পদ পূরণের জন্য পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ যেটি আগে ঘটে।
(গ) নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাকরিতে যোগদান না করলে বা চাকরিতে যোগদানের পর চাকরি হতে ইস্তফা প্রদান করলে শূন্য পদ পূরণের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ডিপিসির সভায় অপেক্ষমাণ তালিকা এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রেজাল্ট শিট উপস্থাপনপূর্বক শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করতে হবে। পাশাপাশি কমিটির সদস্যগণের উপস্থিতিতে অপেক্ষমাণ তালিকা হতে সুপারিশকৃত প্রার্থীকে তার নিয়োগের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে।
(ঘ) ডিপিসি কর্তৃক অপেক্ষমাণ তালিকা হতে সুপারিশকৃত প্রার্থীদের রোল নম্বরের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং ডিপিসি'র সদস্য-সচিব কর্তৃক প্রার্থীকে তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোন কল, এসএমএস, ই-মেইল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)-এর মাধ্যমে অবহিত করতে হবে।
(ঙ) সুপারিশকৃত প্রার্থীকে মোবাইল ফোন কল, এসএমএস, ই-মেইল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)-এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অবহিত করার পাশাপাশি তার স্থায়ী ঠিকানায় রেজিস্ট্রি পত্র যোগে কমপক্ষে ১০ (দশ) কার্যদিবস সময় দিয়ে নিয়োগপত্র দিতে হবে।
(চ) অপেক্ষমাণ তালিকা হতে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠতা প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পরে নির্ধারিত হবে। ডিপিসি অপেক্ষমাণ তালিকার কোনো প্রার্থীকে চাকরিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করলে তার জ্যেষ্ঠতা তার ঐ পদে যোগদানের তারিখ হতে নির্ধারিত হবে। অপেক্ষমাণ তালিকা হতে দুই বা ততোধিক প্রার্থী যদি একই দিনে একই পদে যোগদান করেন সেক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা পূর্বে প্রস্তুতকৃত রেজাল্টের মেধাক্রম অনুসারে নির্ধারিত হবে। তবে একই নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়সের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে এবং বয়স একই হলে নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের শিক্ষাবর্ষের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে।
০২। অনুচ্ছেদ ১(ক) এ যা কিছু উল্লেখ থাকুক না কেন কোটা সংক্রান্ত ২৩ জুলাই ২০২৪ খ্রি. তারিখের ০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.০১৪.২৪-১৪১ নং প্রজ্ঞাপন জারির পর উক্ত প্রজ্ঞাপনের আলোকে যে সকল নিয়োগের জন্য ডিপিসি কর্তৃক সুপারিশ করা হয়েছে কিন্তু অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি সে সকল ক্ষেত্রে বিবেচ্য পরিপত্র জারির পর ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে ডিপিসি কর্তৃক অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করতে হবে। পরবর্তীকালে উক্ত বিজ্ঞপ্তির পদ শূন্য হলে অনুচ্ছেদ ১(গ), ১(ঘ) ও ১(ঙ) অনুসরণ করে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তুতকৃত অপেক্ষমাণ তালিকার মেয়াদ হবে অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরির তারিখ হতে ০১ (এক) বৎসর অথবা পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ যেটি আগে ঘটে।
০৩। বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এর বিজ্ঞপ্তির অধীনে সুপারিশকৃত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ পরিপত্র প্রযোজ্য হবে না।
০৪। যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা হবে, ডিপিসি কর্তৃক সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বাইরে অন্য কোনো বিজ্ঞাপনের শূন্য পদ বা অন্য কোনোভাবে পদ শূন্য হলে উক্ত শূন্য পদ পূরণের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকার কোনো প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা যাবে না।
০৫। উপর্যুক্ত সরকারি সিদ্ধান্ত সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন সরকারি দপ্তর/পরিদপ্তর/অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের সকল পর্যায়ের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে অনুরোধ করা হলো।
স্বাক্ষরিত
(ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান)
সিনিয়র সচিব
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
No comments
Your opinion here...