এলজিইডি নির্মিত বিদ্যালয় ভবন হস্তান্তরে নতুন কমিটি গঠন – প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিস্তারিত নির্দেশনা
এলজিইডি নির্মিত বিদ্যালয় ভবন হস্তান্তরে নতুন কমিটি গঠন – প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিস্তারিত নির্দেশনা
প্রতিবেদন:
তারিখ: ২৯ মে ২০২৫ | স্থান: ঢাকা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নতুন করে একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইন ও কমিটি গঠন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। আজ এক অফিস আদেশে দেশব্যাপী এলজিইডি (LGED) কর্তৃক নির্মিত বিদ্যালয় ভবন গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (PEDP-4), চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং নতুন জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে দেশজুড়ে বহু নতুন ভবন ও অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মিত হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এসব ভবনের হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় এলজিইডি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (MoU)-এর গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে ৮.৩, ৮.৪ ও ৮.৭ ধারার নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
গঠিত কমিটির কাঠামো:
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশ অনুযায়ী, প্রতিটি নির্মিত ভবন গ্রহণের জন্য নিম্নোক্ত কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে:
১. উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার – সভাপতি
২. উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার) – সদস্য
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী, এলজিইডি (সংশ্লিষ্ট উপজেলা) – সদস্য
৪. এসএমসি/এডহক কমিটির সভাপতি (সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়) – সদস্য
৫. প্রধান শিক্ষক (সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়) – সদস্য সচিব
কমিটির কার্যপরিধি:
এই কমিটি ভবন গ্রহণের পূর্বে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক যাচাই করে নিশ্চিত করবে, যার মধ্যে রয়েছে:
নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণ কাজ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা;
নির্ধারিত ডিজাইন এবং সিডিউল অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা, র্যাম্প, সিঁড়ি ইত্যাদির নির্মাণ ও পরিমাণ যাচাই;
ভবনের রং ও গঠন কাঠামোর সার্বিক গুণগতমান পর্যবেক্ষণ;
সমঝোতা স্মারকের ৮.৩ ধারার আলোকে Certificate of Completion প্রাপ্তি নিশ্চিত করা;
৮.৭ ধারার আলোকে ভবনের আয়ুষ্কাল সংক্রান্ত সনদ (Certificate about Life Span) সংগ্রহ নিশ্চিত করা;
সিডিউল অনুযায়ী আসবাবপত্র সরবরাহ ও তার গুণমান যাচাই;
ভবনের নির্মাণ সাল, ফাউন্ডেশন ইত্যাদি তথ্য ভবনে খোদাই করে লেখা আছে কিনা তা নিশ্চিত করা।
গুরুত্ব ও প্রভাব:
এই নির্দেশনার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামোর মানোন্নয়ন এবং নির্মাণ কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অতীতে ভবন নির্মাণের পরও নানাবিধ ত্রুটি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ভবন হস্তান্তরের পর দেখা যায়, দরজা-জানালার মান নিম্নমানের, র্যাম্প বা সিঁড়ি ঠিকভাবে নির্মিত হয়নি, কিংবা নির্ধারিত আসবাবপত্র সরবরাহ হয়নি।
এবার সরাসরি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এসব বিষয় যাচাই করে ভবন গ্রহণ করবে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষা অবকাঠামো পরিকল্পনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোঃ মিজানুল হক স্বাক্ষরিত এ অফিস আদেশে দেশের সকল উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উল্লিখিত নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উপসংহার:
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ভৌত অবকাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভবন নির্মাণের গুণগতমান নিশ্চিত করতে এই কমিটি ও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ অবশ্যই একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ, সুন্দর ও টেকসই শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
No comments
Your opinion here...