জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
Views
Full PDF Download Link
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
তারিখ, ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ড. মুহাম্মদ ইউনূস
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিষয়ঃ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
প্রিয় মহোদয়,
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিগত ৩ অক্টোবর ২০২৪ এবং ২৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বলে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমরা সানন্দ চিত্তে আপনার নিকট পেশ করছি। আমাদের প্রত্যাশা এই প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করা গেলে তা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
জুলাই-আগষ্ট ২০২৪ এ সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিকতায় সরকার 'জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন' গঠন করে। বাংলাদেশে একটি 'জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, নিরপেক্ষ ও দক্ষ জনপ্রশাসন' ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনের আদেশে উল্লেখ রয়েছে।
জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহের সম্যক অনুধাবন এবং যথাযথ সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিশন অনলাইনে এবং স্থানীয়ভাবে রাজধানী ঢাকা এবং এর বাইরে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নাগরিকদের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা করে। এদের মধ্যে রয়েছেন সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডার এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বেসরকারি খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান 'ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস্ অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ' এর নেতৃবৃন্দ, সিভিল সোসাইটির সদস্যবৃন্দ এবং সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ।
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশসমূহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মানব সম্পদের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সেবাসমূহ মৌলিক সরকারি সেবা নিশ্চিত করা এবং পরিবহন ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণসহ দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের মূল দায়িত্ব এখনো সরকার বহন করে। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য ২৬টি সংস্কার কমিশন বা কমিটি গঠন করা হলেও বাংলাদেশে এখানো গতানুগতিক জনপ্রশাসন ব্যবস্থা বহাল রয়েছে, যেখানে জনপ্রশাসনের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রগত হয়ে আছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের তেমন সুযোগ নেই; অধিকন্তু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ খুবই দুর্বল বলে কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের রাজনীতিকীকরণের কারণে জনপ্রশাসনে মেধা ও দক্ষতার গুরুত্ব অনেকটা হ্রাস পেয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ পদায়ন এবং পদোন্নতিতে মেধা ও দক্ষতার স্থান নিয়েছে দলীয় আনুগত্য ও চাটুকারিতা। কেন্দ্রীভূত ও অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অধীনে জনপ্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা অনুচিত পদোন্নতি এবং সুবিধা পেয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার পরিচালনার দোসরে পরিণত হয়েছিলেন।
বর্ণিত অবস্থার আলোকে এই কমিশন জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর বেশ কিছু কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। জনপ্রশাসন বহুবিধ উপাদান দ্বারা তৈরি একটি কাঠামো এবং এর কর্মপদ্ধতিও অত্যন্ত জটিল। তদুপরি জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠির ভিন্ন ভিন্ন এবং বিপরীতমুখী মতামতও রয়েছে। সে কারণে মাত্র তিন/চার মাসের মধ্যে জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে জনপ্রশাসনের সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন প্রায় দুঃসাধ্য একটা কাজ। এজন্য কমিশনের এই প্রতিবেদনে কিছু অপূর্ণতা থাকতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, কমিশনের সদস্যগণ মতবিনিময়, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন লিখনসহ যাবতীয় কাজ নিজেরাই সম্পন্ন করেছেন। কমিশন এখানে কোন উন্নয়ন সহযোগী বা কোনো পরামর্শকের সহায়তা নেয়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কমিশনের প্রত্যাশা সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। জনপ্রশাসন সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া বিধায় সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জন্য ছোটো আকারে একটি স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বা সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই কমিশনের উপর জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণের জন্য অন্তর্বতী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা পরিষদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কমিশনের সদস্যবৃন্দ সেই সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অন্যান্য সকল দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান যারা এই কমিশনের কাজে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে জানাচ্ছে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
বিনম্র শ্রদ্ধান্তে,
Full PDF Download Link
No comments
Your opinion here...