ad

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ২০১১

Views

 


প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ২০১১

মুখবন্ধ 

 শিক্ষাক্রম নবায়ন ও পরিমার্জন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭২ সালে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন ১৯৭৪ সালে রিপোর্ট পেশ করে। শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের আলোকে ১৯৭৫ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১৯৭৮ সালে সাত খণ্ডে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের প্রথম খণ্ডে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষান্তরের শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রমের আলোকে ১৯৭৮-৮২ সালের মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চাম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবর্তন করা হয় এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তা চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৬-৮৮ সালে ব্যাপক আকারে প্রাথমিক শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও নবায়ন করা হয় এবং সনাতন উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। এই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পর্যায়ক্রমে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়ে প্রবর্তন করা হয়। এই শিক্ষাক্রমের বৈশিষ্ট্য হলো প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীর কতটুকু আচরণিক পরিবর্তন, কতটুকু জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটবে বলে প্রত্যাশা করা হয় তা সুনির্দিষ্ট করা। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম ২০০২ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ে চালু ছিল। যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রথম ২০০২ সালে পরিমার্জন করা হয় এবং ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ে প্রবর্তন করা হয়। 10010 বর্তমানে যে রকম দ্রুতগতিতে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবন ধারার পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে এর সাথে শিক্ষার্থীর শিখন চাহিদারও পরিবর্তন হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনা করে এবং জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ২০১১ এর শেষ দিকে পরিমার্জন করা হয়। শিক্ষাক্রম পরিমার্জনকালে যে সকল বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয় সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০, বৈশ্বিক পরিবর্তন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শিশু শ্রম নীতি, সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা, বিজ্ঞান মনস্কতা এবং বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রম পরিমার্জনে সম্পৃক্ত ছিলেন শ্রেণি শিক্ষক, শিক্ষক প্রশিক্ষক, বিষয় বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা তত্ত্বাবধায়ক, নীতি নির্ধারক, ব্যবস্থাপক, বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমকিস প্রমুখ। বিশেষজ্ঞদল প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রান্তিক যোগ্যতা পুনঃনির্ধারণ করেন। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ১৩টি ও প্রান্তিক যোগ্যতা ২৯টি নির্ধারণ করা হয়। এই ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা থেকে প্রাথমিক শিক্ষাক্রম কাঠামোর অন্তর্গত ১২টি বিষয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা শনাক্ত করা হয়। প্রান্তিক যোগ্যতা থেকে প্রথম থেকে পঞ্চাম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য, মেধা ও মানসিক পরিপক্কতা বিবেচনা করে শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা বা আবশ্যকীয় শিখনক্রম প্রণয়ন করা হয়। আবশ্যকীয় শিখনক্রম অনুসরণ করে বিষয়ভিত্তিক বিস্তৃত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে বিস্তৃত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ১২টি বিষয়ের জন্য ৩৩টি পাঠ্যপুস্তক, ৩৩টি শিক্ষক সংস্করণ ও ২৫টি শিক্ষক সহায়িকা/নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়। আশা করা যায় শিক্ষক পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু, শিক্ষক সংস্করণ/নির্দেশিকা/সহায়িকা যথাযথভাবে অনুসরণ ও আয়ত্ব করে শ্রেণিকক্ষে কার্যকর শিখন শেখানো কার্যক্রম/পদ্ধতি/কৌশন পরিচালনা করবেন এবং ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম মুদ্রণ ও প্রকাশের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাঁদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র পাল
চেয়ারম্যান 
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড










No comments

Your opinion here...

Theme images by fpm. Powered by Blogger.