উত্তরপত্রে কীভাবে উত্তর উপস্থাপন করতে হবে?
Views
TIPS AND TRICKS এর সকল আপডেট
উত্তরপত্রে কীভাবে উত্তর উপস্থাপন করতে হবে?
আজ একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। না, কোন কাজে নয়। উদ্দেশ্যহীন গমন। শিক্ষকগণ বার্ষিক পরীক্ষার উত্তরপত্র কাটা/খাতা দেখা নিয়ে ব্যস্ত। শিঘ্রই ফলাফল ঘোষণা/প্রকাশ করবে। বেশ সুন্দর ছাপানো উত্তরপত্র। আমি টেবিলে ছড়ানো ছিটানো উত্তরপত্রের দিকে শুধু চোখ ফেললাম। শিক্ষার্থীরা কেমন লিখছে, কেমন পারছে, উত্তরের মান কেমন তা দেখিনি বা যাচাই করিনি। তেমন ইচ্ছাও বা সেরকম কোন উদ্দেশ্যেও ছিল না। তবে অল্প দর্শনেই যা দেখার দেখে ফেলেছি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী খাতায় কাংখিত মার্জিন রাখেনি, যদিও সবাই মার্জিন রেখা টেনেছে। স্ট্যান্ডার্ড মার্জিন না রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের দায়ী করা যাবে না, শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা যদি সুস্পষ্ট নির্দেশনা পেত, তাহলে এত শিক্ষার্থী ভুল করতো না।
মার্জিন সম্পর্কে শিক্ষার্থী তো দূরের কথা, অধিকাংশ শিক্ষকের সঠিক ধারণা নেই। অনেকেরই ধারণা উত্তরপত্রে উপর-বামে যে রেখাটানা হয় তা মার্জিন। এটাকে মার্জিন রেখা বলে। এ রেখা হতে খাতার কিনারা (Edge) পর্যন্ত ফাঁকা জায়গাটাকে মার্জিন বলে। সাধারণত: দু' ধরনের মার্জিনের প্রচলন আছে বক্স স্কেলিং এবং উপর-বামে জায়গা রেখে স্কেলিং করা। তবে ছাপানো বইতে বক্স স্কেলিং মার্জিনের প্রচলন বেশী। কিন্তু সাধারণ খাতাপত্র, উত্তরপত্রে উপরে-বামে মার্জিন রাখার প্রচলন সর্বত্র। উত্তরপত্রের বাম দিকে এক ইঞ্চি পরিমান আর উপরের দিকে সোয়া ইঞ্চ/দেড় ইঞ্চি পরিমান রেখে স্কেলিং করা হয়। এ রেখার ভিতরে লেখা যাবে কিন্তু এর বাইরে লেখা যাবে না। এক্কেবারে নিষিদ্ধ। এটা জমির আইল। জমির মালিক যা কিছু রোপন করবে এই আইলের ভিতরের দিকে। আর আইলে শালিসিরা অবস্থান করে সিদ্ধান্ত হবে। অর্থাৎ এ মার্জিনে পরীক্ষক নাম্বার দিবেন। এ ফাঁকা জায়গাটা পরীক্ষকের জন্য রিজার্ভ। এখানে কোনভাবেই শিক্ষার্থী যেতে পারবে না, পরীক্ষার্থী মার্জিনে কোন প্রশ্নের ক্রমিক নাম্বারও লিখতে পারবে না। এটা করলে সেটা সীমালঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। মার্জিন রাখা হয় প্রথমত উত্তরপত্রের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য। মার্জিন রেখাকে ধরেই মূল পত্রে উত্তর সাজিয়ে লেখার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে যারা ভাল মানের পরীক্ষক, তারা মার্জিনে শুধু নাম্বার বন্টনই লিখে না, বিভিন্ন মন্তব্যও লিখেন যেমন: Excellent, Good, Nice, Fine, Fantastic, অসাধারণ বা অপ্রাসঙ্গিক, অতিরিক্ত, অত্যধিক বানান ভুল, ইত্যাদি।
উত্তরপত্রে উপস্থাপন একজন শিক্ষার্থীর একটা বিশেষ দক্ষতা। কোনো কোনো শিক্ষার্থী সঠিক উত্তর জানে কিন্তু উপস্থাপন কৌশলের অভাবে ভাল নাম্বার পায় না। কিন্তু উপস্থাপন কৌশলে দক্ষ হওয়ায় কম জেনেও ভাল স্কোর পায়। স্কুলের শিক্ষক শুধু পড়াবেন না, শিক্ষার্থীরা কীভাবে উত্তরপত্রে উপস্থাপন করবে তার অনুশীলনও করাতে হবে। মার্জিন উত্তরপত্রের সব পৃষ্ঠায় থাকতে হবে। মার্জিন রেখা পেন্সিল দিয়ে দেয়া শ্রেয়। অনেকে রঙিন কালি ব্যবহার করে, যা ঠিক না। এ কালি অনেক সময় চুয়ায়ে খাতা নষ্ট করে ফেলে।- উত্তরপত্র সাধারণত পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে দেয়। এ সময় মার্জিন রেখা টানতে হয়। উপরের মার্জিন রেখার এক লাইন নীচ থেকে উত্তর লেখা শুরু করতে হয়। তবে ঠিক মাঝখানে '১নং/২নং/৩নং /--- প্রশ্নের উত্তর ইত্যাদি লিখলে খাতার সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রথম প্রকাশ। এখন মনে করুন, ১নং প্রশ্নে ক, খ, গ, ---ড পর্যন্তের ১০ টি উত্তর দিতে হবে। কিন্তু অনেক পরীক্ষার্থী ১নং ক-উত্তর, ১নং খ-উত্তর, ১নং ঘ-উত্তর এভাবে লিখে। কিন্তু এটা না করে শুধু 'ক' লিখে সঠিক উত্তরটি লিখতে হবে। বার বার উত্তর লেখার প্রয়োজন নেই। বাক্য লিখতে ডানদিকে খাতার কিনারে (Edge) এক 'বর্ণ' পরিমান জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। বর্ণের সাইজ খুব বড় হবে না, আবার খুব ছোটও হবে না। তবে সবার হাতের লেখা সুন্দর না হলেও পরীক্ষক যেন পড়তে পারে। দু' লাইনের মাঝে কিছু ফাঁকা রাখতে হবে। একটা প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ হলে দু' লাইন স্পেস রেখে আবার '--নং প্রশ্নের উত্তর ' মার্জিন রেখার ভিতরের ঠিক মাঝে লিখে আবার উত্তর লিখতে হয়। উত্তরপত্রের নিচে এক লাইন ফাঁকা রাখতে হবে। কোন উত্তর পরের পৃষ্ঠায় গেলে অ:পৃ:দ্র: লিখে যেতে হবে। কোন প্রশ্নের উত্তর ১৫/২০ লাইন হলে উত্তর শুরুর পৃষ্ঠায় ন্যুনতম যেন ৫ লাইন লেখা যায়। তার কম হলে পরের পৃষ্ঠায় যেয়ে শুরু করাই শ্রেয়। বর্তমান ডিমাই সাইজের উত্তরপত্রে ১৪-১৬ লাইন লেখা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে একাধিক পয়েন্ট থাকলে কোনটায় ক, খ, গ; কোন টায় প্রথমত, দ্বিতীয়ত, তৃতীয়ত, আবার কোনটায়, এক, দুই, তিন বা রোমান সংখ্যা ব্যবহার করা যায়। এখন অনেক পরীক্ষায় উত্তরপত্রে ছাপানো লেখা থাকে 'এখান থেকে লেখা শুরু' বা 'এই পৃষ্ঠায় লেখা নিষেধ'।
উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠার জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। শুধু প্রথম পাতা বা কভার পৃষ্ঠার উপরের মার্জিনে পরীক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় তথ্যাদি লেখার অনুশীলন করানোর দায়িত্বও শিক্ষকদের। আমি যখন ১৯৯৭/৯৮ সালে রাজশাহীর ডিপিইও তখন পাক্ষিক পরীক্ষা/মডেল টেস্টে বৃত্তি পরীক্ষার অনুরূপ উত্তরপত্র দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের রীতি চালু করেছিলাম, যা পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে পরীক্ষা ভীতি যেমন দূর হয়েছিল, তেমনি উত্তর পত্রের উপরের অংশ পূরণ করতে শিক্ষার্থীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। উত্তরপত্রের বাহিরে লুজ নিলে তা যেন উত্তরপত্রের সাথে সংযুক্ত ও হিসাবে থাকে সে জ্ঞানও দিতে হবে।
সর্বোপরি, উত্তরপত্রের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কথাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সুতরাং শিক্ষক শুধু ভাল পড়ালেই হবে না, ভালভাবে উত্তরপত্রে যাতে শিক্ষার্থী উপস্থাপন করতে পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষককেই। তাই বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা উত্তরপত্রে কী কী ভুল করেছে তা নিয়ে অভিভাবকসহ কথা বলা যেমন উচিত, তেমনি প্রত্যেক পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের সাথে উত্তরপত্রে উত্তর উপস্থাপন নিয়ে টিপস দেয়াও শিক্ষকের বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য।
জনাব মো: দেলোয়ার হোসেন, প্রাক্তন উপপরিচালক, প্রাশিঅ এর টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত।
No comments
Your opinion here...