শ্রুতিলেখক নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৩
শ্রুতিলেখক নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৩
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
বিধি-১ শাখা
(www.mopa.gov.bd)
নং-05.00.0000.170.22,006.২২ - 153
প্রজ্ঞাপন
তারিখঃ 27 আষাঢ় ১৪৩০
১১ জুলাই ২০২৩
Rules of Business 1996 এর rule 4 (ix) (a) এ প্রদত্ত অনুবলে, সরকার, সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার কারণে স্বহস্তে লিখিতে সক্ষম নহেন এমন পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় সহযোগী হিসাবে শ্রুতিলেখক নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করিল, যথা:-
১। শিরোনাম ও প্রবর্তন।- (১) এ নীতিমালা শ্রুতিলেখক নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৩ নামে অভিহিত হইবে।
(২) এই নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। সংজ্ঞা।- বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কিছু না থাকিলে, এই নীতিমালায় -
(ক)“শ্রুতিলেখক” অর্থ এমন একজন ব্যক্তিকে বুঝাইবে যিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত
কারণে কিংবা স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার কারণে স্বহস্তে লিখিতে সক্ষম নহেন এমন পরীক্ষার্থীদের
প্রদত্ত বক্তব্য শ্রবণ করিয়া উত্তরপত্রে অবিকল বা হুবহু লিখিবেন; এবং
(খ) “নিয়োগ কমিটি” অর্থ নিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত সংশ্লিষ্ট বাছাই/নির্বাচন কমিটি।
৩। শ্রুতিলেখক নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ১৬ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ঝ) ও (ড) অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিযুক্তি এবং শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রসহ প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রয়োজনীয় সাচ্ছন্দ্যের জন্য উপযোগী পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ সুবিধা (reasonable accommodation) প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
৪। নীতিমালার কার্যপরিধি।- (১) এই নীতিমালা সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের জন্য প্রযোজ্য হইবে;
(২) এই নীতিমালা ব্যতিরেকে অন্য কোনো নির্দেশনা কিংবা এ নীতিমালার খণ্ডিত বা পরিবর্তিত নির্দেশনা ইচ্ছামত
কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করিতে পারিবেনা।
৫। শ্রুতিলেখকের যোগ্যতা।- নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হইবেন তফসিলে উল্লিখিত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি এবং শ্রুতিলেখক নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ও প্রমিত উচ্চারণ, বোধগম্য হস্তাক্ষর, শুদ্ধ বানান এবং দ্রুত লেখার পারদর্শিতা বিবেচনা করা যাইতে পারে।
৬। শ্রুতিলেখকের দায়িত্ব।- (১) একজন শ্রুতিলেখক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নিম্নবর্ণিত দায়িত্ব পালন করিবেন;
যথা:-
ক) প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীকে প্রাপ্ত প্রশ্ন নির্ভুলভাবে পড়িয়া শুনাইবেন;
(খ) প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর পক্ষে প্রদেয় উত্তর অবিকল বা হুবহু ও সঠিকভাবে লিখিবেন ;
(গ) উত্তরপত্রে পরীক্ষার্থী কর্তৃক পূরণীয় তথ্য (রোল নম্বর/রেজিস্ট্রেশন নম্বর /প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নাম
ইত্যাদি) প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর পক্ষে নির্ভুলভাবে পূরণ করিবেন;
(ঘ) শ্রুতিলেখক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীকে চিত্রসম্বলিত প্রশ্ন যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করিবেন।
(২) পরীক্ষা কেন্দ্রের সমস্ত নিয়ম-কানুন শ্রুতিলেখক মানিয়া চলিবেন।
৭। শ্রুতিলেখক নিয়োগ বা মনোনয়ন পদ্ধতি।— (১) নিয়োগ কমিটি শ্রুতিলেখক সরবরাহ করিবেন: তবে শর্ত থাকে যে, নিয়োগ কমিটি ও পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবশ্যই আন্তরিক হইয়া এই নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২ অনুসরণ করিয়া যোগ্য ও দক্ষ শ্রুতিলেখক মনোনয়নের নিশ্চয়তা বিধান করিতে হইবে।
(২) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার কারণে স্বহস্তে লিখতে সক্ষম নহেন এমন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রাপ্তির পরপরই শ্রুতিলেখক নিয়োগের জন্য নিয়োগ কমিটির সভাপতির নিকট আবেদন করিবেন।
(৩) শ্রুতিলেখক নিয়োগের আবেদন প্রাপ্তির পর আবেদনকারীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করিয়া নিয়োগ কমিটি শ্রুতিলেখক হিসেবে সহায়তা করিবার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্কাউট/গার্লস গাইড/ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর সদস্য মনোনয়ন প্রদানের জন্য নির্বাহী পরিচালক/ক্ষেত্র মতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্কাউটস/গার্লস গাইড/বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর এর প্রধান/স্থানীয় কার্যালয়ে অথবা পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধানকে অনুরোধ করিয়া পত্র প্রেরণ করিবেন।
(৪) নিয়োগ কমিটি বাংলাদেশ স্কাউটস/গার্লস গাইড/বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর এর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সহিত যোগাযোগ করিয়া শ্রুতিলেখক মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করিবেন।
(৫) নিয়োগ কমিটির নিকট হতে শ্রুতিলেখক মনোনয়ন প্রদানের অনুরোধ প্রাপ্তির পর বাংলাদেশ স্কাউটস/গার্লস গাইড/বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান প্রধান শ্রুতিলেখকের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা যাচাইপূর্বক প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রুতিলেখক মনোনয়ন প্রদান করিবেন।
৮। শ্রুতিলেখকের সংখ্যা।- নিয়োগ কমিটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার কারণে স্বহস্তে লিখিতে সক্ষম নহেন এমন প্রতি পরীক্ষার্থীর জন্য ২ (দুই) জন শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা করিবে যাহাতে কোনো কারণে একজন শ্রুতিলেখক অসুস্থ হইলে বা অন্য কোনো কারণে উপস্থিত হইতে সক্ষম না হইলে অপর ব্যক্তি শ্রুতিলেখকের দায়িত্ব পালন করিতে পারেন।
৯। অতিরিক্ত সময় প্রাপ্তি।- (১) শ্রুতিলেখকের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী পরীক্ষার মোট সময়ের এক-চতুর্থাংশ অতিরিক্ত সময় পাইবেন। অর্থাৎ, প্রতি ঘন্টা পরীক্ষার সময়ের বিপরীতে ১৫ (পনের) মিনিট অতিরিক্ত সময় পাইবেন। এক ঘন্টার কম সময় ব্যাপী পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় হইবে আনুপাতিক হারে। তবে পরীক্ষার ব্যাপ্তি যতই সংক্ষিপ্ততর হোক না কেন, অতিরিক্ত সময়ের ন্যূনতম ৫(পাঁচ) মিনিটের কম হইবেনা।
(২) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী ব্যতীত আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো পরীক্ষার্থীর শ্রুতিলেখকের প্রয়োজন হইলে সেই ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীগণ প্রতি ঘন্টা পরীক্ষা সময়ের বিপরীতে ১০ (দশ) মিনিট অতিরিক্ত সময় প্রাপ্ত হইবেন। এক ঘন্টার কম সময় ব্যাপী পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় হইবে আনুপাতিক হারে, তবে পরীক্ষার ব্যাপ্তি যতই সংক্ষিপ্ততর হোক না কেন, অতিরিক্ত সময়ের ন্যূনতম সীমা ৫ (পাঁচ) মিনিটের কম হইবে না।
১০। সহায়ক উপকরণ সংগে নেয়া। — (১) যে সকল পরীক্ষায় সাধারণভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ক্যালকুলেটর, জ্যামিতি বক্স বা অনুরূপ সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুমতি থাকে, সেই সকল পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক পরীক্ষার্থীর নির্দেশ অনুযায়ী উক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করিতে পারিবেন।
(২) প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী তাহার উপযোগী সরঞ্জাম যেমন, টকিং ক্যালকুলেটর, ব্রেইল স্লেট, টেইলর ফ্রেম, জীওমেট্রি ম্যাট, হুইল চেয়ার, ব্রেইল স্কেল অ্যাবাকাস ইত্যাদি ব্যবহার করিতে পারিবেন।
১১। কেন্দ্র পরীক্ষকের দায়িত্ব।- কেন্দ্র পরীক্ষকবৃন্দ উক্ত কেন্দ্রে কোনো প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিলে, তাহার জন্য-
(ক) পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করিবেন;
(খ) প্রতিবন্ধিতার ধরণ অনুযায়ী উপযোগী টেবিল-চেয়ারের ব্যবস্থা করিবেন;
গ) অনুচ্ছেদ ৯ অনুযায়ী অতিরিক্ত সময় প্রদান করিবেন; এবং
(ঘ) বিষয়টি আন্তরিকতার সহিত দেখিবেন।
১২। পরীক্ষার্থীর প্রমাণক।- (১) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩১ অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র (সুবর্ণ নাগরিক কার্ড) প্রতিবন্ধীতার পরিচায়ক হিসাবে বিবেচিত হইবে।
(২) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নয় কিন্তু আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কিংবা স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার কারণে স্বহস্তে লিখিতে সক্ষম নহেন এইরূপ পরীক্ষার্থী শ্রুতিলেখক লইয়া পরীক্ষা দিতে চাহিলে সেইক্ষেত্রে সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার নিকট হইতে প্রত্যয়ন আনিবেন যে, পরীক্ষার্থী দুর্ঘটনাজনিত কিংবা স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার কারণে স্বহস্তে লিখিতে সক্ষম নহেন এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ইহা পর্যালোচনা করিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।
১৩। শ্রুতিলেখকের সম্মানী বা পারিতোষিক।- নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য নিয়োগকৃত শ্রুতিলেখকদেরকে সম্মানী বা পারিতোষিক প্রদান করিতে পারিবে। সম্মানী বা পারিতোষিক প্রদানের নিমিত্ত নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতকৃত বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখিবে।
১৪। নীতিমালা সংশোধন, পরিমার্জন বা অস্পষ্টতা দূরীকরণ।-এই নীতিমালা বাস্তবায়নে কোন অসুবিধা দেখা দিলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে নির্দেশনা জারি করিতে পারিবে।
তফসিল
[নীতি ৫ দ্রষ্টব্য]
স্বাক্ষরিত
(মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী)
সিনিয়র সচিব
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
No comments
Your opinion here...