ad

প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন বিষয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সিনিয়র সচিব মহোদয়ের বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশসমূহ

Views

 


প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন বিষয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সিনিয়র সচিব মহোদয়ের বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশসমূহ (ছবিতে পুরো বক্তব্য দেয়া আছে) :

১. সচিব স্যার অনেকগুলো বিদ্যালয়ের পরিদর্শন
করেছেন সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি মাত্র ৬০
শতাংশ যা দুঃখজনক।
২. শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার,
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর,
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শৈথ্যল্যের কারণে
বা মনিটরিং জোরদার না থাকার ফলে ব্যাঙের
ছাতার মতো কিন্ডারগার্টেন সমূহ গড়ে উঠছে যা
হতাশাজনক। এক্ষেত্রে ক্লাসে শিক্ষকদের
আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করেন। সরকারি
বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের ২০,০০০ টাকায় যে
সেবা পাবার কথা ক্লাসে, তা আমরা করতে পারি না।
কিন্ডারগার্টেন এ শিক্ষকরা পারে সে সেবা মাত্র ৫-৬
হাজার টাকাতে।
৩. প্রায় ৬৬ হাজার বিদ্যালয়ের ৪ লক্ষ শিক্ষক পাঠদান
করে থাকেন। তাদের মধ্যে কতজন শিক্ষক প্রাক
থেকে পঞ্চম শ্রেণীর বইগুলো নিজেরা পড়েছেন
অথবা পড়ে ক্লাসে গমন করেন? প্রশ্ন স্যারের।
৪. যেকোনো ক্লাসে ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ - ৫ জন
যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ অংক কষে দিতে পারছে।
কিন্তু ২৫ থেকে ২৬ জন শিক্ষার্থী তা পারে না।
অনেক সময় শিক্ষকও গণিতের অনেক বিষয়গুলো
পারে না। শিক্ষকের দায়িত্ব পালন না করা
অসাদাচারণ ও অদক্ষতার শামিল যা শাস্তিযোগ্য
অপরাধ।
৫. মোটিভেশন বা নীতিকথায় কাজ না হলে আইন
প্রয়োগ করতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
এ বিশাল শিক্ষার্থীর ঠিকমতো শিক্ষিত না হওয়ার
দূর্নাম কেন ঘাড়ে নেবে? অন্য মন্ত্রণালয় বা অন্য
বিভাগ যদি পারে তাহলে আমরা কেন পারব না?
৬. বেশিরভাগ শিক্ষক শহরে অবস্থান করে। কেননা
সেখানে তাদের সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়ায়।
কর্মস্থল ১৮-২০ এমনকি ৫০ কিলোমিটার দূরেও
থেকেও স্কুলে যাতায়াত করে। সেখানে শিক্ষক
নিজের সন্তানের প্রতি যতটা মমতা দেখায় তার
বিদ্যালয়ের সন্তানের প্রতি সে রকম মমতা লক্ষ্য
করা যায় না। যা খুবই দু:খজনক!
৭. মেট্রোপলিটন এলাকায় যে সময়সীমা মোতাবেক
স্কুল পরিচালিত হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে মফস্বল
এলাকাতেও সে সময়ে স্কুলগুলো পরিচালিত হবে।
এক্ষেত্রে সকাল বেলাতে শিক্ষক কোথা হতে
আসবেন তা দেখার বিষয় আমার নয়। কেননা
কর্মস্থলে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতেই হবে।
৮. দেশের ৪১৮ জন শিক্ষক বিনা অনুমতিতে
কর্মস্থলের বাইরে থাকে। কেউ বা বিদেশে থাকে;
কেউবা স্কুলে যান না। মাঝে মাঝে স্কুলে আসেন,
বেতন নেন - যা খুবই দুঃখজনক। এরা কি শিক্ষক?
প্রশ্ন সচিব স্যারের।
৯. অধিদপ্তরে ২ - ৩টি হট লাইন চালু হবে। সেখানে
অভিভাবকরা তাদের বিদ্যালয়ের বিদ্যমান
ত্রুটিসমূহ বলতে পারবেন। অনেক কর্মকর্তা
শিক্ষকদের শোকজ করে থাকেন। শিক্ষকরা
শোকজের জবাব দেন। শোকজের জবাবে কর্মকর্তা
শিক্ষকদের ক্ষমা করে দেন। এতে কোনো শিক্ষকের
শাস্তি হয়েছে বলে মনে হয় না। আরও কঠোর হবার
পরামর্শ।
১০. বর্তমানে অফলাইন-অনলাইন মনিটরিং চালু
আছে। বেশ কয়েকটি নম্বর সহকারী শিক্ষক, প্রধান
শিক্ষকদের সেভ করে রাখতে হবে যেকোনো সময়
অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় থেকে whatsApp -এর
মাধ্যমে লাইভ পরিদর্শন করবেন।
১১. সোনার বাংলায় ছোট কচি কাঁচা ছেলেমেয়েদের
মুখের দিকে তাকিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা
নিশ্চিত করতেই হবে। এজন্য যা যা করা দরকার
তা তা করা হবে। সচিব স্যার বলেছেন, আমি এই
সকল শিশুদের সাথে বেঈমানি করতে পারবো না।
এ ব্যাপারে বিন্দু মাত্র ছাড় নয়।আমাকে যদি আরো
কঠোর হতে হয় তাও হবো।
১২. আমাদের অফিসের ছোট বাবু, বড় বাবুদের
দৌরাত্ম কমাতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক
হয়রানিসহ যেকোনো অভিযোগ সহ্য করা হবে না।
১৩. শিক্ষক অনলাইনে বদলি হলেও অনেক
উপজেলায় টাকার বিনিময়ে করবেন মর্মে সচিব
স্যারের কাছে অভিযোগ গেছে। এ ব্যাপাের তিনি
কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেন।
১৪. অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্র আছে ভবন নাই, আবার
কোনো বিদ্যালয়ে় ছাত্র নাই ভবন আছে। এই
সমস্যার সমাধান করা হবে।
১৫. কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ভবনের ছাদ
কোনোদিন পরিষ্কার করা হয় না। এর ফলে ছাদ
ড্যাম হয়েগেছে। বিভিন্ন ধরনের গাছপালা জন্ম
নিয়েছে। সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার বিল্ডিং
সামান্য দেখভালের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যা খুবই
দুঃখজনক। কোনো শিক্ষক এ ব্যাপারে দেখে না,
এমনকি এসএমসিও এ ব্যাপারে নজর দেয় না।
১৬. সচিব স্যার বিগত দিনে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়
পরিদর্শন করেছেন। সেখানে একটি বিদ্যালয়ের
চিত্রে দেখা গেছে মোট ৩৬ জন শিক্ষার্থী, তার
বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে ৭ জন; যারা সবাই শহর
থেকে আসে। ঐ স্কুলের আশেপাশে কোনো শিক্ষক
থাকে না।
১৭. প্রাথমিক শিক্ষায় কিছু বিষয় রয়েছে - সবাই
সবাইকে খুশি করে চলে। সহকারী শিক্ষক, প্রধান
শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার,
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা
অফিসার সবাই সবাইকে খুশি করে চলেন। তিনি
মনে করেন সবাই খুশি হলে চলবে না। শুধু
শিক্ষার্থীরা খুশিতে নেই। তারা খুশিমনে লেখাপড়াটা
করতে পারছে না। তাদের সেবা করতে হবে,
মানুষের মতো মানুষ করতে হবে, তাদের খুশি
করতে হবে। সে দায়িত্ব আমাদের সকলের। এজন্য
ম্যানুয়াল পদ্ধতি বাদ দিয়ে অটোমেশন সিস্টেমে
যাবেন মর্মে তিনি জানিয়েছেন।
১৮. প্রাথমিক পর্যায় হতে মাধ্যমিক পর্যায়ে যখন
শিক্ষার্থীরা যান তখন মাধ্যমিকের শিক্ষকরা বলেন
যে, তারা কিছু পারে না। অর্থাৎ সব দায়-দায়িত্ব বা
দোষ প্রাথমিক পর্যায়ের উপর গিয়ে পড়ে। তাহলে
আমরা কি মূর্খ? আমরা কি মূর্খ জাতি গঠন
করছি? প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের না পড়িয়ে
মাধ্যমিক স্তরে পাঠাচ্ছি এ দায় কেন আমরা নেব?
এর অবসান হওয়া প্রয়োজন।
১৯. সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, সহকারী
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা
অফিসার সহ সবারই বদলি হচ্ছে অনলাইনে। আশা
করা যায় প্রাথমিক শিক্ষা এশিয়ার মধ্যে বা বিশ্বের
মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে। এ জন্য সকলের
আন্তরিকতা কামনা করেন। আমরা যদি যুদ্ধ করে
স্বাধীন হতে পারি তবে এই কাজটা আমরা
অনায়াসে করতে পারবো।
২০. মামলার বিষয়ে তিনি বলেন অযথা মামলা করে
আমাদের বিব্রত করবেন না। যৌক্তিক দাবি ছাড়া
কোনো বিষয়ে আমরা মাথা নত করব না। সমস্যা
নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করলে অবশ্যই
সমাধান সম্ভব।




No comments

Your opinion here...

Theme images by fpm. Powered by Blogger.