নেপিয়ার ঘাসের চাষ পদ্ধতি
Views
গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। ঘাস শুধু গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নয়, ঘাস চাষ করে এর লভ্যাংশ দ্বারা অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব। তাছাড়া কাঁচা ঘাস সহজ প্রাপ্য হলে গাভী পালনও সহজতর হবে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে হবে। সেজন্য দরকার ব্যাপকভাবে উচ্চ উৎপাদশীল ঘাস চাষ। আমাদের দেশে একটি উন্নতজাতের ঘাস রয়েছে যার উৎপাদন অন্যান্য ঘাসের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকায় এ ঘাস জন্মানো সম্ভব এবং তা থেকে প্রায় সারা বছরই গবাদির কাঁচা ঘাসের চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। ঘাসটির নাম নেপিয়ার। নেপিয়ার এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। দেখতে আখের মত, লম্বা ৬-১২ ফুট বা তার চেয়েও বেশি হয়ে থাকে। এই ঘাস দ্রুত বধর্নশীল, সহজে জন্মে, পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও খরা সহিষ্ণু। একবার রোপন করলে ৩/৪ বছর পর্যন্ত এর ফলন পাওয়া যায়।
(চাষ পদ্ধতি)
#জমি_নির্বাচন
পানি নিষ্কাশনের জন্য ভাল ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ যেখানে বৃষ্টি বা বর্ষার পানি জমে থাকে না এরূপ জমি নেপিয়ার চাষের জন্য উত্তম। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এ ঘাস রোপন করা যায়, তবে বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
#চাষের_সময়
নেপিয়ার ঘাস সারা বৎসরই রোপন করা যায়। সাধারণতঃ বর্ষা মৌসুমেই রোপন করা ভাল। বর্ষার প্রারম্ভে এই ঘাসের কাটিং বা চারা রোপন করা হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে চারা বা কাটিং লাগালে প্রথম বছরেই ৩/৪ বার পর্যন্ত ঘাস কাটা যেতে পারে। চারা বা কাটিং লাগানোর পর যদি রৌদ্র হয় বা মাটিতে রস কম থাকে তাহলে চারার গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে।
#ঘাস_রোপণ_পদ্ধতি
সারা বর্ষা মৌসুমেই এ ঘাস লাগানো যায়। তবে বর্ষার শুরুতেই রোপণের উৎকৃষ্ট সময়। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে রোপণ করা হলে প্রথম বছরই তিন থেকে চার বার ঘাস কাটা যায়। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব দুই থেকে তিন ফুট এবং এক চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব দেড় ফুট হতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে চারা লাগানোর পর পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত প্রতি একর জমি রোপণের জন্য সাত থেকে আট হাজার চারা বা কাটিংয়ের প্রয়োজন হয়
#সার_প্রয়োগ_ও_পানিসেচ
ভালো ফলন ও গাছের বৃদ্ধির জন্য সার এবং পানির প্রয়োজন রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অন্য সময়ে সাধারণত পানি সেচের প্রয়োজন হয়।
#জমি_তৈরির_সময়
১.৫০ থেকে ২.০০ টন গোবর প্রতি একরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার ইত্যাদি প্রয়োজন ও পরিমাণ মতো সার ব্যবহার করা যায়।
#ঘাস_কাটার_পদ্ধতি
কাটিং বা মোথা লাগানোর ৬০-৭০ দিন পর প্রথমবার ঘাস সংগ্রহ করা যায় এবং এর পর প্রতি ৬-৮ সপ্তাহ পরপর জমি হতে ঘাস সংগ্রহ করা যায়। মাটির ৫-৬ ইঞ্চি উপর থেকে ঘাস কাটতে হয়। প্রথম কাটিং-এ ফলন একটু কম হলেও দ্বিতীয় কাটিং থেকে পরবর্তী ২/৩ বছর পর্যন্ত ফলন বাড়তে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ৪-৪-১/২ বছর পর পুনরায় কাটিং বা মোথা লাগাতে হবে।
#ফলন
বছরে প্রতি হেক্টরে ১৪০-১৮০ টনের মত ঘাস উৎপাদিত হয়। সাইলেজ করার ক্ষেত্রে ঘাসে ফুল ফোটার পূর্বে বা পর পরই কাটা ভাল। এতে খাদ্যমান বেশি থাকে।
#খাওয়ানোর_নিয়ম
জমি থেকে ঘাস কাটার পর ঘাস যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। আস্ত ঘাস গবাদিকে খেতে দিলে অপচয় বেশি হয়। তাই মেশিন, দা অথবা কাঁচি দ্বারা ২-৩ ইঞ্চি লম্বা করে কেটে খাওয়ানো ভাল। এই কাটা ঘাস খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়।
#সতর্কতা
নেপিয়ারের জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগের পর অনেক দিন খরা হলে ইউরিয়া হতে নাইট্রেট বা নাইট্রাইট ঘাসের মধ্যে উৎপন্ন হতে পারে এবং পরবর্তীতে অধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার পর দ্রুত বেড়ে ওঠা এই ঘাস কেটে খাওয়ানো ঝুকিপূর্ণ। এতে বিষক্রিয়া হতে পারে।
(#ঘাস_কাটার_সময়_নিম্নলিখিত_সতর্কতা_অবলম্বনকরলে_বিষক্রিয়ার_প্রভাব_থেকে_গবাদিপশুকে_মুক্ত_রাখা_যায়।)
(১) জমিতে সার ছিটাবার ২ সপ্তাহের মধ্যে ঘাস কাটা উচিত নয়।
(২) সার ছিটাবার পরে দীর্ঘ দিন খরা থাকার পর হঠাৎ অধিক বৃষ্টিপাতের পর দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ঘাস কেটে খাওয়ানো উচিত নয়।
(৩) ঘাস কাটার একমাস পূর্বে সার ছিটানো উচিত।
নেপিয়ার উচ্চ ফলনশীল ঘাস। এই ঘাস চাষের মাধ্যেমে গবাদিপশুর কাঁচা ঘাসের চাহিদা মিটানো সম্ভবপর। কাঁচা ঘাস/সাইলেজের ব্যবহার যথাযথভাবে করতে পারলে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে যা দ্বারা ক্রমান্বয়ে দেশের দুধের চাহিদা মিটানো সম্ভব। সম্প্রতি আমাদের দেশে দুধের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে দুধ উৎপাদন বাড়লে কৃষকের যেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি ঘটবে।
#সংরক্ষণ
নেপিয়ার ঘাস শুকিয়ে সংরক্ষণ করা সুবিধাজনক নয়। তবে কাঁচা ঘাস সাইলেজ করে শুষ্ক মৌসুমে সংরক্ষণ করা যায়।
BaBu Agro-Farm Limited
নেপিয়ার ঘাসের চাষ পদ্ধতি
গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। ঘাস শুধু গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নয়, ঘাস চাষ করে এর লভ্যাংশ দ্বারা অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব। তাছাড়া কাঁচা ঘাস সহজ প্রাপ্য হলে গাভী পালনও সহজতর হবে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে হবে। সেজন্য দরকার ব্যাপকভাবে উচ্চ উৎপাদশীল ঘাস চাষ। আমাদের দেশে একটি উন্নতজাতের ঘাস রয়েছে যার উৎপাদন অন্যান্য ঘাসের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকায় এ ঘাস জন্মানো সম্ভব এবং তা থেকে প্রায় সারা বছরই গবাদির কাঁচা ঘাসের চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। ঘাসটির নাম নেপিয়ার। নেপিয়ার এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। দেখতে আখের মত, লম্বা ৬-১২ ফুট বা তার চেয়েও বেশি হয়ে থাকে। এই ঘাস দ্রুত বধর্নশীল, সহজে জন্মে, পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও খরা সহিষ্ণু। একবার রোপন করলে ৩/৪ বছর পর্যন্ত এর ফলন পাওয়া যায়।
(চাষ পদ্ধতি)
#জমি_নির্বাচন
পানি নিষ্কাশনের জন্য ভাল ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ যেখানে বৃষ্টি বা বর্ষার পানি জমে থাকে না এরূপ জমি নেপিয়ার চাষের জন্য উত্তম। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এ ঘাস রোপন করা যায়, তবে বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
#চাষের_সময়
নেপিয়ার ঘাস সারা বৎসরই রোপন করা যায়। সাধারণতঃ বর্ষা মৌসুমেই রোপন করা ভাল। বর্ষার প্রারম্ভে এই ঘাসের কাটিং বা চারা রোপন করা হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে চারা বা কাটিং লাগালে প্রথম বছরেই ৩/৪ বার পর্যন্ত ঘাস কাটা যেতে পারে। চারা বা কাটিং লাগানোর পর যদি রৌদ্র হয় বা মাটিতে রস কম থাকে তাহলে চারার গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে।
#ঘাস_রোপণ_পদ্ধতি
সারা বর্ষা মৌসুমেই এ ঘাস লাগানো যায়। তবে বর্ষার শুরুতেই রোপণের উৎকৃষ্ট সময়। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে রোপণ করা হলে প্রথম বছরই তিন থেকে চার বার ঘাস কাটা যায়। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব দুই থেকে তিন ফুট এবং এক চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব দেড় ফুট হতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে চারা লাগানোর পর পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত প্রতি একর জমি রোপণের জন্য সাত থেকে আট হাজার চারা বা কাটিংয়ের প্রয়োজন হয়
#সার_প্রয়োগ_ও_পানিসেচ
ভালো ফলন ও গাছের বৃদ্ধির জন্য সার এবং পানির প্রয়োজন রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অন্য সময়ে সাধারণত পানি সেচের প্রয়োজন হয়।
#জমি_তৈরির_সময়
১.৫০ থেকে ২.০০ টন গোবর প্রতি একরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার ইত্যাদি প্রয়োজন ও পরিমাণ মতো সার ব্যবহার করা যায়।
#ঘাস_কাটার_পদ্ধতি
কাটিং বা মোথা লাগানোর ৬০-৭০ দিন পর প্রথমবার ঘাস সংগ্রহ করা যায় এবং এর পর প্রতি ৬-৮ সপ্তাহ পরপর জমি হতে ঘাস সংগ্রহ করা যায়। মাটির ৫-৬ ইঞ্চি উপর থেকে ঘাস কাটতে হয়। প্রথম কাটিং-এ ফলন একটু কম হলেও দ্বিতীয় কাটিং থেকে পরবর্তী ২/৩ বছর পর্যন্ত ফলন বাড়তে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ৪-৪-১/২ বছর পর পুনরায় কাটিং বা মোথা লাগাতে হবে।
#ফলন
বছরে প্রতি হেক্টরে ১৪০-১৮০ টনের মত ঘাস উৎপাদিত হয়। সাইলেজ করার ক্ষেত্রে ঘাসে ফুল ফোটার পূর্বে বা পর পরই কাটা ভাল। এতে খাদ্যমান বেশি থাকে।
#খাওয়ানোর_নিয়ম
জমি থেকে ঘাস কাটার পর ঘাস যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। আস্ত ঘাস গবাদিকে খেতে দিলে অপচয় বেশি হয়। তাই মেশিন, দা অথবা কাঁচি দ্বারা ২-৩ ইঞ্চি লম্বা করে কেটে খাওয়ানো ভাল। এই কাটা ঘাস খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়।
#সতর্কতা
নেপিয়ারের জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগের পর অনেক দিন খরা হলে ইউরিয়া হতে নাইট্রেট বা নাইট্রাইট ঘাসের মধ্যে উৎপন্ন হতে পারে এবং পরবর্তীতে অধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার পর দ্রুত বেড়ে ওঠা এই ঘাস কেটে খাওয়ানো ঝুকিপূর্ণ। এতে বিষক্রিয়া হতে পারে।
(#ঘাস_কাটার_সময়_নিম্নলিখিত_সতর্কতা_অবলম্বনকরলে_বিষক্রিয়ার_প্রভাব_থেকে_গবাদিপশুকে_মুক্ত_রাখা_যায়।)
(১) জমিতে সার ছিটাবার ২ সপ্তাহের মধ্যে ঘাস কাটা উচিত নয়।
(২) সার ছিটাবার পরে দীর্ঘ দিন খরা থাকার পর হঠাৎ অধিক বৃষ্টিপাতের পর দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ঘাস কেটে খাওয়ানো উচিত নয়।
(৩) ঘাস কাটার একমাস পূর্বে সার ছিটানো উচিত।
নেপিয়ার উচ্চ ফলনশীল ঘাস। এই ঘাস চাষের মাধ্যেমে গবাদিপশুর কাঁচা ঘাসের চাহিদা মিটানো সম্ভবপর। কাঁচা ঘাস/সাইলেজের ব্যবহার যথাযথভাবে করতে পারলে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে যা দ্বারা ক্রমান্বয়ে দেশের দুধের চাহিদা মিটানো সম্ভব। সম্প্রতি আমাদের দেশে দুধের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে দুধ উৎপাদন বাড়লে কৃষকের যেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি ঘটবে।
#সংরক্ষণ
নেপিয়ার ঘাস শুকিয়ে সংরক্ষণ করা সুবিধাজনক নয়। তবে কাঁচা ঘাস সাইলেজ করে শুষ্ক মৌসুমে সংরক্ষণ করা যায়।
BaBu Agro-Farm Limited